চীফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
চীফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন সেনা কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভরশীল নয়: প্রসিকিউশন

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ (সংশোধিত)-এর ধারা ২০(সি) সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রতিবেদনকে “ভুল ও বিভ্রান্তিকর” আখ্যা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়।

আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে চীফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় জানায়, সম্প্রতি কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত “সেনা সদর দপ্তর আইন প্রয়োগ না করা পর্যন্ত আসামি ১৫ সেনা কর্মকর্তা কর্মরত: প্রসিকিউটর” শিরোনামের সংবাদে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম–এর বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উক্ত প্রতিবেদনে এমনভাবে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে যাতে জনমনে ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারে যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন এখনো প্রয়োগ হয়নি, কিংবা এই আইনের কার্যকারিতা সেনা সদর দপ্তরের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। অথচ বাস্তবতা ও আইনের ভাষা তার সম্পূর্ণ বিপরীত।

চীফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ (সংশোধিত)-এর ধারা ২০(সি) অনুযায়ী,

“Where a formal charge is submitted against any person under sub-section (1) of section 9 of this Act, such person shall be disqualified –
(a) from being elected, or being, a member of Parliament; or
(b) from being elected or appointed, or being, a member, commissioner, chairman, mayor or administrator, as the case may be, of any Local Government Bodies; or
(c) from being appointed to any service of the Republic; or
(d) from holding any other public office.”

এবং ধারা ২০(সি)(২)-এ বলা হয়েছে, শুধুমাত্র ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ডিসচার্জ বা অ্যাকুইটেড হলে এই অযোগ্যতা রহিত হবে।

আরও পড়ুন‘গরিবের আইনজীবী’ খ্যাত আবদুল বাসেত মজুমদার: ওকালতি থেকে কল্যাণে উৎসর্গিত এক জীবন

অর্থাৎ, কোনো আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (Formal Charge) দাখিলের পর থেকে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা বা অন্য কোনো জনপদে অধিষ্ঠিত হওয়ার অযোগ্য হন, এবং এই অযোগ্যতা শুধুমাত্র ট্রাইব্যুনালের রায়ে মুক্তি বা খালাসের মাধ্যমে প্রত্যাহারযোগ্য।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ধারা ২৬ অনুসারে, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ অন্য কোনো বিদ্যমান আইনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হলে এই আইনই প্রাধান্য পাবে। একইভাবে, বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৭(৩) অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে:

এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোন সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য কিংবা অন্য কোন ব্যক্তি বা সংগঠনকে আটক, ফৌজদারীতে সোপর্দ কিংবা দণ্ডদান করিবার বিধান–সংবলিত কোন আইন বা আইনের বিধান এই সংবিধানের কোন বিধানের সহিত অসমঞ্জস বা তাহার পরিপন্থী, এই কারণে বাতিল বা বেআইনী বলিয়া গণ্য হইবে না কিংবা কখনও বাতিল বা বেআইনী হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে না।

চীফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় বলেছে, উপরোক্ত সাংবিধানিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ অন্য যেকোনো আইনের ওপর প্রাধান্য পায়, ফলে এর কার্যকারিতা বা প্রয়োগ কোনো প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করে না।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শুধুমাত্র ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়াগত বিষয় উল্লেখ করেছিলেন, যা আইনটির ব্যাখ্যা নয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম তাঁর বক্তব্যকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যা আইন ও বাস্তবতার পরিপন্থী।

বিজ্ঞপ্তির শেষাংশে বলা হয়, “সংবেদনশীল বিচারিক বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে যথাযথ দায়িত্বশীলতা ও তথ্যের নির্ভুলতা বজায় রাখা প্রয়োজন। আইন ও সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়ে সাংবাদিকতার শুদ্ধতা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে আহ্বান জানানো হয়েছে, তথ্যগত ভুল সংশোধন করে আইনি ব্যাখ্যার যথার্থতা নিশ্চিত করতে একটি সংশোধনী ও ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য।