চট্টগ্রামে বছরে ১৬ হাজার রিম কার্টিজ পেপারের (বিশেষ ধরনের সরকারি কাগজ) চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে গত একবছরে সরবরাহ হয়েছে মাত্র ৪০০ রিম কার্টিজ পেপার। ফলে রেজিস্ট্রি দলিল ও আদালতের দরখাস্তসহ নানা কাজে অপরিহার্য এই বিশেষ ধরনের সরকারি কাগজের চরম সংকট চলছে চট্টগ্রামে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম হওয়ায় ৫ টাকার সরকারি এই কাগজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় কেনা–বেচা হচ্ছে বাজারে। শীঘ্রই কার্টিজ পেপারের সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে এর মূল্য আরো ছাড়াতে পারে বলে আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে এই বিশেষ ধরনের সরকারি কাগজ আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনের ট্রেজারি শাখায় পাওয়া যাবে বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি কমিশনার তৌহিদুল আলম। কার্টিজ পেপার বাংলাদেশে তৈরি হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি বাইরে থেকে বিজি প্রেস (বাংলাদেশ সরকারি ছাপাখানা) আমদানী করে। বিজি প্রেস চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, আমদানী করা কার্টিজ পেপার চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। তারা সরবরাহ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিমান্ড লেটার (চাহিদাপত্র) পাঠাতে বলেছে। গত ২০ জুলাই বিজি প্রেসকে ডিমান্ড লেটার পাঠিয়েছি। আশা করি দুয়েক সপ্তাহের মধ্যে কার্টিজ পেপার পেয়ে যাবো।’
কার্টিজ পেপার সংকটের কারণে উচ্চমূল্যে বিক্রি প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার তৌহিদুল আলম বলেন, ‘চট্টগ্রামে বছরে ১৬ হাজার রিম কার্টিজ পেপারের চাহিদা রয়েছে। গত এক বছরে ৪০০ রিম এবং এর আগে দুই দফায় ৭০ ও ১০ রিমসহ দেড় বছরে ৪৮০ রিম কার্টিজ পেপার আমাদেরকে বিজি প্রেস সরবরাহ করেছে। তাই চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম হওয়ায় সংকট সৃষ্টি হয়। তবে এই সংকটকে কেন্দ্র করে সরকারি দামের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই।’
গতকাল শনিবার দুপুরে পরিচয় গোপন করে ক্রেতা হিসেবে চট্টগ্রামের কোর্ট হিল এলাকার কার্টিজ পেপার বিক্রেতা বেশ কয়েকজন ভেন্ডারের কাছে গিয়ে মূল্য যাচাই করেন এই প্রতিবেদক। তখন ৬০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত কার্টিজ পেপারের মূল্য এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন তারা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দলিল ও আদালতের কার্যক্রমের বিভিন্ন দরখাস্তসহ সরকারি বিভিন্ন কাজে নিত্য নৈমিত্তিক কার্টিজ পেপারের ব্যবহার হয়। কমিশন বাদ দিয়ে ৪৮০ পিসের কার্টিজ পেপারের প্রতি প্যাকেট ২ হাজার ৪০০ টাকায় জেলা প্রশাসনের ট্রেজারি শাখা থেকে ক্রয় করেন লাইসেন্স প্রাপ্ত ভেন্ডাররা। সে হিসেবে সরকারি এই বিশেষ ধরনের কাগজের মূল্য ৫ টাকার বেশি নয়।
কার্টিজ পেপার সংকেটের কারণে ভোগান্তি তুলে ধরে চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী মো. সাইফুদ্দিন বলেন, ‘দেওয়ানী মামলার আর্জি ও জবাবসহ সব ধরনের দরখাস্ত কার্টিজ পেপারে লিখতে হয়। দলিলের নির্দিষ্ট স্ট্যাম্পের বাইরে অতিরিক্ত লেখার জন্য কার্টিজ পেপার ব্যবহার করতে হয়। লিগ্যাল সাইজের স্ট্যাম্পের ৫ ইঞ্চি মার্জিনের পরে ৬ থেকে ৭ ইঞ্চি লেখা যায়। কার্টিজ পেপারে ২ ইঞ্চি মার্জিনের পরে প্রায় ১০ থেকে ১১ ইঞ্চি লেখা যায়। কার্টিজ পেপার সংকটের কারণে বেশী বেশী স্ট্যাম্পের ব্যবহার করতে হচ্ছে। ফলে প্রিন্ট, ফটোকপি ও অফিস খরচসহ সংশ্লিষ্ট খরচ বেড়ে যাচ্ছে।’
চট্টগ্রামের ৩০ থেকে ৪০টি দেওয়ানী আদালতে প্রতিদিন আনুমানিক এক হাজার কার্টিজ পেপারের ব্যবহার হয় জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘চার–পাঁচ মাস ধরে কার্টিজ পেপারের সংকট চলছে। আদালতের কার্যক্রমে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে কার্টিজ পেপারের পরিবর্তে বার ফরম ব্যবহার করছি। সমিতির পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের কার্টিজ পেপারের সংকট দূর করার জন্য মাননীয় অর্থমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী বরাবরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’ আজাদী