জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে করা আপিল শুনানিতে আদালত বর্জন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। নথিপত্র নিয়ে সম্পূরক আবেদনের বিষয়ে বিচারক আদেশ না দেওয়ায় তারা আদালত বর্জন করেন বলে জানা গেছে।
আজ মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে মামলায় আপিলের শুনানি চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। অন্যদিকে, দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় অর্থের উৎসের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন গত ২২ অক্টোবর আদালতে জমা দিয়ে, এ বিষয়ে একটি আদেশ চান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। কিন্তু আদালত জানায়, এ মামলায় যুক্তি উপস্থাপন শেষে ওই আবেদনটির ওপর আদেশ দেবেন আদালত। তবে এরপরও এ বিষয়ে গত ২২ অক্টোবর খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী তাদের দাখিল করা প্রতিবেদনের বিষয়ে আদেশ চান। তখন আদালত আবেদনটি ‘কিপ টু দ্য রেকর্ড (নথিভুক্তি)’ আদেশ দেন।
এরপর মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আপিল শুনানির পূর্বে ট্রাস্টের অর্থের উৎসের বিষয়ে দেওয়া প্রতিবেদনের ওপর আদালতের কাছে আদেশ প্রার্থনা করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। কিন্তু আদালত আদেশ না দেওয়ায় এ বিষয়ে আপিল বিভাগে যাওয়ার হবে বলে আদালতকে জানানো হয়। সে কারণে আজকের (মঙ্গলবার) মতো মামলাটির আপিল শুনানি মুলতবি করতে আদালতের কাছে আরজি জানানো হয়। কিন্তু আদালত মামলাটির আপিল শুনানি মুলতবি না করায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালত বর্জন করেন এবং মামলার শুনানি না করেই বেরিয়ে আসেন।
এসময় এ জে মোহাম্মদ আলী ছাড়াও খালেদা জিয়ার আইনজীবী আবদুর রেজাক খান, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, আমিনুল ইসলাম, এ এইচ এম কামরুজ্জামন, ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, মো. আখতারুজ্জামান প্রমুখ আদালত থেকে বেরিয়ে আসেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালত থেকে বেরিয়ে আসার পর প্রথমে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান শুনানি করেন। তারপর রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেন বিচারিক আদালত। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ মামলার অন্য পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি চার আসামি হলেন, সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমান। এর মধ্যে পলাতক আছেন, তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান। পাশাপাশি ছয় আসামির প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়।
রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে ওই দিন বিকালে (৮ ফেব্রুয়ারি) নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
রায় ঘোষণার ১১ দিন পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকালে রায়ের সার্টিফায়েড কপি (অনুলিপি) হাতে পান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। এরপর থেকে হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়।