রাঙামাটির দশ উপজেলা থেকে বিচারপ্রার্থীরা সুষ্ঠু বিচারের আশায় আদালতে আসেন। গত জুলাই মাসে জেলা জজ অবসরে যাওয়ায় এবং যুগ্ম জজের বিচারিক ক্ষমতা না থাকায় এ আদালতে মামলার জট বাড়ছে। এ কারণে তৈরি হচ্ছে মামলার দীর্ঘ সূত্রিতা। এছাড়াও বিচারপ্রার্থীরা অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে আদালতে আসতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকারসহ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে রাঙামাটিতে স্থাপিত হয় জেলা ও দায়রা জজ আদালত। গত জুলাই মাসে জেলা জজ অবসরে যাওয়ার পর মামলার জট আরও তীব্র হয়েছে। বিচার কাজে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ সূত্রিতা। জেলা জজ নারী ও শিশুসহ বিশেষ ট্রাইবুনালের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বিচার কার্য পরিচালনা করতেন। জেলা জজ আদালতের স্পেশাল ট্রাইবুনালে ২৩৫টি মামলা, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা ৩৫৯টি, নিয়মিত মামলা ১১৪৭টি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। জেলা জজ পদটি শূণ্য হওয়ায় যুগ্ম জেলা জজ দায়িত্বে আছেন। বিচারিক ক্ষমতা না থাকায় তিনি বিচার কার্য পরিচালনা করতে পারছেন না। বিচারক না থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা।
লগদু থেকে আসা আব্দুল সামাদ নামে এক বিচারপ্রার্থী জানান, বিচারক না থাকায় কোনও মামলাই হচ্ছে না। যে কারণে তারা হয়রানির মধ্যে পড়েছেন। প্রতিটি মামলার তারিখে আদালতে এসে আবার ফেরত যাচ্ছেন।
কাউখালী থেকে আসা আরেক বিচারপ্রার্থী আবুল কামাল বলেন,‘প্রতিবেশীর সঙ্গে জমি সংক্রান্ত একটি মামলা চলছে। প্রায় ২০ বছর হবে মামলার রেশ এখনো শেষ হয়নি। জাল কাগজ করে আমার জায়গা তার নামে লিখে নিয়েছে। মামলার পর মামলায় আমি জর্জরিত। এলাকায়ও বিচার পাই না। আদালতেও বিচারের জন্য ঘুরছি।’
কাপ্তাই উপজেলা থেকে আসা সোলাইমান বলেন, ‘জমি সংক্রান্ত যেসব মামলা আছে তার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বছরের পর বছর পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এমনও মামলা আছে, যে মামলা বাবা দায়ের করেছে, এখন ছেলেও মৃত্যুশয্যা, তবুও নিষ্পত্তি হয়নি। দিন দিন মামলার জট বাড়ছে। এখানে বিচারক সংকট রয়েছে। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ দ্রুত বিচারক সংকট দূর করার ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
রাঙামাটি জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আফসার আলী বলেন,‘জেলা জজের অনুপস্থিতির কারণে বিচারপ্রার্থীরা চরমভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।’
রাঙামাটি জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুম্মিতা চাকমা বলেন,‘পার্বত্য রাঙামাটির উপজেলাগুলো অনেক দুর্গম। দশটি উপজেলার মধ্যে প্রায় ৭টি উপজেলা থেকে নৌ-পথে রাঙামাটি জেলা সদরে আসতে হয়। বিচারপ্রার্থীদের শুনানির একদিন আগে রাঙামাটি এসে থাকতে হয়। এসব বিষয় বিবেচনা করলে বুঝা যায়, বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। যতদ্রুত সম্ভব জেলা জজ নিয়োগ করা হলে বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে।
অ্যাডভোকেট আব্দুর গাফফার (মুন্না) বলেন, ‘যতদিন জেলা জজ নিয়োগ করা হচ্ছে না, ততদিন বিচারিক ক্ষমতাটা যুগ্ম জেলা জজকে দেওয়া হোক। যুগ্ম জজ জেলা জজের দায়িত্বে থাকলেও উনার বিচারিক ক্ষমতা নেই। তার কারণে বিচারকার্য আটকে আছে। ’
রাঙামাটি জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি), রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম আইন পরিবর্তন করে ২০০৮ সালে জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে বিচারাধীন মামলা আছে ১০ হাজারের মতো। দুই জন বিচারকরে পক্ষে এতো মামলা পরিচালনা করা খুব কঠিন। এখানে আরও একজন অতিরিক্ত জেলা জজ ও যুগ্ম জজের পদ সৃষ্টি করা হলে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।