গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন খাল-বিল বেদখল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, সেগুলো উদ্ধার করতে গেলে সরকারকে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়। বাধা আসে আদালত থেকেও।
তিনি বলেন, ‘আমরা সিএস খতিয়ান দেখে ড্রেজার লাগিয়ে দেই। সেখানে কে কী স্থাপনা করেছে সেটা আমার দেখার কথা না। কিন্তু, এখন হাইকোর্টেই গেলে দেখা যায় স্টে (স্থগিতাদেশ) করে দেয়। স্যরি, আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি―মনে হয় যেন আদালতে আমাদের মাননীয় বিচারপতিরা বসে আছেন স্থগিতাদেশ দেওয়ার জন্য।’
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম, বাংলাদেশ আয়োজিত প্রয়াত ‘সাংবাদিক এম ওমর ফারুকের স্মরণসভা ও পরিবারকে চেক হস্তান্তর’ অনুষ্ঠানে বিচারকদের প্রতি সম্মান রেখেই মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ভূমিদস্যুরা শহরের নিম্নাঞ্চল ভরাট করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা ভূমিদস্যুদের নিয়ে লেখেন। আমিও দেখছি তাদের (ভূমিদস্যু) বিরুদ্ধে কিভাবে কী করা যায়।’
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নগর নিয়ে যেসব সাংবাদিক কাজ করেন, তাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আপনাদের (সাংবাদিক) কাছ থেকে কিছু চাপ থাকলে সরকার ও মন্ত্রীদের বিষয়গুলো চোখে পড়বে। তাহলে নগরের উন্নয়ন হবে। নগরকে সুস্থ পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে সাংবাদিকদের লেখা উচিত। সরকার ও মন্ত্রীদের চোখে আঙুল দিয়ে নাগরিক সমস্যা দেখানোর দায়িত্ব সাংবাদিকদের। এসময় মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিজেরাই ফুটপাত, পার্ক নোংরা করছি। আমরা নিজেরাই নোংরা। কিন্তু বিদেশে গেলে আমরা এসব করতে পারি না। ’
মন্ত্রী রাজউকের সমালোচনা করে বলেন, ‘রাজউকের বিধান আছে ফুটপাত থেকে ৫ ফুট ছেড়ে ভবন নির্মাণের। কিন্তু ৯৮ শতাংশ ভবন সেই নিয়ম মানে না। তবুও রাজউক অথরিটি চুপ। আবাসিক এলাকায় রাজউকের লোকদের সামনে বাণিজ্য স্থাপনা হচ্ছে। কী কারণে যেন সবাই অন্ধ হয়ে যায়। আবার পরে ভাঙার জন্য চেষ্টা করে, তবুও পারে না। কিন্তু স্থাপনা নির্মাণ করার সময় কেউ কিছু বলে না।’ নদী দখল ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বে অনেক শহরের নদী ময়লা ছিল, তা এখন দর্শনার্থী স্থলে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আমাদের তুরাগ নদী ও বালু নদীর পাশে গন্ধের কারণে ৫ মিনিট দাঁড়ানো যায় না।’
নগর পরিকল্পনাবিদদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, যারা প্ল্যান করছেন, তাদেরকে ভবিষ্যৎ চিন্তা করে প্লান করতে হবে। স্যুয়ারেজ সিস্টেম আলাদা করতে না পারলে সমস্যা থেকে যাবে। স্যুয়ারেজ পাইপ কোথায় গেল তা দেখারও কেউ নেই। এভাবে হলে কোনোদিন নগর সুন্দর হবে না।
মন্ত্রী জানান, উত্তরায় ১৫ হাজার হাউজিং ও পূর্বাচলের ৭০ হাজার হাউজিংয়ের স্যুয়ারেজ প্লান পূর্ত মন্ত্রণালয় নিজেরাই করছে। সেখানে ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের ওপর নির্ভর করবো না।’
অনুষ্ঠানে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রয়াত এম ওমর ফারুকের পরিবারের মধ্যে অর্থসহায়তা চেক হস্তান্তর করা হয়।
সংগঠনের সভাপতি অমিতোষ পালের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মতিন আব্দুল্লাহর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব নিউজ হারুন উর রশীদ,ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন, রাজউকের ডিটেইল এরিয়া প্লানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা স. ম. গোলাম কিবরিয়া, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগের পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক আবুল ফজল রাজু, প্রয়াত সাংবাদিক এম ওমর ফারুকের স্ত্রী সানজিদা শওকত প্রমুখ।
নগর প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম