প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগের পর বর্তমানে সুদূর কানাডায় একাকী নিভৃত জীবনযাপন করছেন সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। দেশটিতে তার ছোট মেয়ে আশা রানী সিনহা বসবাস করলেও মেয়ের বাসায় ওঠেননি তিনি। সদ্য সাবেক এ প্রধান বিচারপতির পারিবারিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে গত সপ্তাহে দেশে ফিরেছেন তার স্ত্রী সুষমা সিনহা।
সূত্র জানায়, দেশে ফেরার পর থেকে সুষমা সিনহা বাসা বদলের কাজে ব্যস্ত আছেন। রাজধানীর কাকরাইলের হেয়ার রোডে প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবন থেকে ব্যক্তিগত আসবাবসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। এগুলো উত্তরার একটি ফ্ল্যাটে ওঠানো হচ্ছে। ওদিকে এসকে সিনহা আপাতত দেশে ফিরবেন না বলে জানা গেছে।
প্রধান বিচারপতির বাসভবন থেকে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা (স্পেশাল অফিসার) ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে আমার কিছুই জানা নেই।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ব্যক্তিগত মালামাল অল্প অল্প করে সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। উত্তরার একটি ফ্ল্যাটে এসব মালামাল নেওয়া হচ্ছে।
২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি এসকে সিনহা। ওই বছরের ১৭ জানুয়ারি তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে ক্রমেই সরকারের সঙ্গে বিচারপতি সিনহার দূরত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের পৃথক শৃঙ্খলা বিধি তৈরি, বিচারকদের পদোন্নতি, বদলি ও শৃঙ্খলা বিধান নিয়ে তৈরি হয় দ্বন্দ্ব। একবার এক বিবৃতিতে বিচারপতি সিনহা বিচার বিভাগে দ্বৈত শাসন চলছে বলেও উল্লেখ করেন।
এর পর গত ১ আগস্ট উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে নিয়ে করা ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে প্রধান বিচারপতির দেওয়া বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন মন্ত্রী, শাসকদলীয় নেতা ও সরকারপন্থি আইনজীবীরা। তারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিও তুলছিলেন। শাসক দলের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের পাল্টা বক্তব্যও যোগ হয় এ ইস্যুতে। এ নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গন। এর মধ্যেই গত ২ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধান বিচারপতি হঠাৎ করেই এক মাসের ছুটির কথা জানিয়ে চিঠি দেন।
পর দিন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। আইনমন্ত্রী জানান, প্রধান বিচারপতি ক্যানসারে আক্রান্ত। পরে ১১ অক্টোবর চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতির এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার ছুটি ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
গত ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধান বিচারপতি। দেশ ছাড়ার আগে প্রধান বিচারপতি তার বাসভবনের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমি অসুস্থ নই। বিচার বিভাগের স্বার্থে আবার ফিরে আসব। ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে একটি মহল প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছেন।
পর দিন অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ১১টি দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর তার কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এ কারণে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসতে চাননি আপিল বিভাগের বিচারপতিরা। এর জেরে প্রধান বিচারপতির দেশে ফেরা নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় গত ১০ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে বসেই পদত্যাগপত্র পাঠান প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। এর পর ১১ নভেম্বর পদত্যাগপত্রটি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছায়। রাষ্ট্রপতি ওই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি নতুন কাউকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেননি।
সূত্র – আমাদের সময়
সম্পাদনা – ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম