করোনাকালে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময় অর্থাৎ গত ২৬ মার্চ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত লকডাউনে সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ ছিল। এ সময় কাজ না করেও সরকারি অফিসের চালকরা প্রতিমাসে ২৫০ ঘন্টা করে ওভারটাইমের জন্য প্রায় তিন কোটি টাকা অতিরিক্ত অর্থ বেতন-ভাতা হিসেবে নিয়েছেন।
এভাবে কাজ না করেও চালকরা সরকারি রাজস্ব খাত থেকে অতিরিক্ত অর্থ নিয়েছেন। এটি শুধু বেআইনি নয় বরং অনৈতিক ও সরকারি চাকরি আইনেরও পরিপন্থী। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধও।
এ কারণে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সরকারের সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহা হিসাব নিয়ন্ত্রক ও অর্থ মন্ত্রণালয় এবং পরিবহন পুলের অতিরিক্ত সচিবকে সোমবার (২১ ডিসেম্বর) ইমেইলে এ নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশে বিষয়টি তদন্ত করে পরিশোধিত টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দেয়া এবং সংশ্লিষ্ট চালক ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, ২৬ মার্চ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত পুরো দেশ ছিল লকডাউনে। জুলাই মাসের প্রথম দিকে সীমিত আকারে সরকারি অফিস আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী সরকারি গাড়ির চালকগন মাসে সর্বোচ্চ ২৫০ ঘন্টা ওভারটাইমের জন্য বেতন-ভাতা পেতে পারেন। যেহেতু করোনাকালীন সময় অফিস-আদালত বন্ধ ছিল সেহেতু সরকারি চালকদের ওভারটাইম করার কোন সুযোগই ছিল না। অথচ বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী অন্য সময়ের মতো লকডাউন চলাকালেও প্রত্যেক ড্রাইভার প্রতিমাসে ২৫০ ঘন্টা ওভারটাইমের জন্য বেতন-ভাতা নিয়েছেন। ওইসব ড্রাইভার প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার অধীনে গাড়ি চালিয়ে থাকেন। ওভারটাইমের প্রত্যয়নের জন্য প্রত্যেক সরকারি অফিসার একটি প্রত্যয়ন পত্র দিয়ে থাকেন। যার ভিত্তিতে ওভারটাইমের অর্থ পরিশোধ করা হয়।
নোটিশে আরো বলা হয়, লকডাউন চলাকালে সরকারি কর্মকর্তাগণ তাদের চালকদের প্রতি মাসে ২৫০ ঘন্টা ওভারটাইমের প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছেন। এভাবে ওভারটাইম না করেও চালকরা সরকারি রাজস্ব থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করেছেন যা শুধু বেআইনি নয় বরং অনৈতিক ও সরকারি চাকরি আইনের পরিপন্থী। সেই সাথে দণ্ডবিধি অনুযায়ী প্রতারণা এবং বিশ্বাসভঙ্গের শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সরকারি চালকরা ওভারটাইম না করেও ওভারটাইমের জন্য বেতন-ভাতা নিয়ে অপরাধ করেছেন। আবার যেসব সরকারি কর্মকর্তা ড্রাইভারকে ওভারটাইম না করা সত্ত্বেও প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছেন তারা প্রত্যেকেই দণ্ডবিধি এবং সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এজন্য নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।