মোহাম্মদ আরিফ উদ্দীন চৌধুরী: প্রথমেই ধন্যবাদ দিতে চাই বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এবং সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দকে। আইনজীবী তালিকাভূক্তি পরীক্ষায় গত ১৯/১১/২০২০ ইং তারিখে ঘটে যাওয়া ন্যক্কারজনক ঘটনা সংক্রান্তে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রচার করার জন্য।
পরীক্ষা দিতে ব্যর্থ হওয়া হাজার হাজার সাধারণ শিক্ষানবিশ অজানা শঙ্কা থেকে আপাতত কিঞ্চিৎ মুক্ত হয়েছেন। তারা পুনরায় পরীক্ষা দিতে পারবে বলে বার কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সাধারণ পরীক্ষার্থীসহ সর্বমহলে স্বস্তির নিশ্বাস এনেছে। স্থানীয় বারের নেতৃবৃন্দসহ বিজ্ঞ আইনজীবীরাও বার কাউন্সিলের দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন।
গত ২৪/১২/২০২০ ইং তারিখে বার কাউন্সিলের সচিব মহোদয় স্বাক্ষরিত বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে দুটি বিষয়ে বার কাউন্সিলের অবস্থান পরিস্কার করা হয়েছে।
১ম দফায়, যে সমস্ত পরীক্ষাকেন্দ্রে সাধারণ পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, অর্থাৎ যেসব কেন্দ্র বাতিল ঘোষিত হয়েছে, সে সকল কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে।
২য় দফায়, যে সমস্ত বিপথে যাওয়া পরীক্ষার্থী এবং বহিরাগতরা পরীক্ষা বানচাল করে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আহত করে, পরীক্ষা দিতে বাধা প্রদান করেছে, পরীক্ষকসহ নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্সাচারীদের আহত করেছে, আক্রমণ করেছে, তাদের চিহ্নিত করে যথাযত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নেবার কথা বলা হয়েছে।
উক্ত বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে গৃহীত দুটো সিদ্ধান্তই সময়োপযোগী এবং সঠিক। উক্ত দুটো সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর হোক, একজন সাধারণ আইনজীবী হিসেবে এই আমার প্রত্যাশা। বিশেষ করে ১ম দফায় গৃহীত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বার কাউন্সিল প্রয়োজনীয় দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করছি।
ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ সকল সাধারণ শিক্ষানবিশদের পরীক্ষা সংক্রান্ত জটিলতায় প্রায় ৩ বৎসরের অধিক সময় ধরে আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন ঝুলে আছে। তার ওপর তাদের সাথে ঘটে যাওয়া চলতি মাসের ১৯ তারিখের ঘটনা মরার উপর খাড়ার ঘাতে পরিণত হয়েছে। তাই বার কাউন্সিল দ্রুত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে, পরীক্ষা গ্রহণপূর্বক পরবর্তী ভাইভাও দ্রুত সম্পন্ন করবেন বলে আশা রাখছি।
২য় দফায় উল্লেখিত বিপথে যাওয়া শিক্ষানবীসসহ বহিরাগতদের বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়ায় বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণ একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হলেও অসম্ভব কিছু নয়। বার কাউন্সিলের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া এটি একটি চরম সন্ত্রাসী কার্যক্রম। এটিকে কোন ভাবেই হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই।
ঘটনাস্থলের সাক্ষী, সিসিটিভি ফুটেজ, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজগুলো থেকে সহজেই এমন ঘৃণ্য সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত মাস্টার মাইন্ডগুলোকে চিহ্নিত করা যাবে বলে বিশ্বাস করি।
এছাড়ও পূর্ব থেকেই এসকল সন্ত্রাসীরা আমাদের এটর্নি জেনারেল, মন্ত্রী মহোদয়, বিচারপতি, বার কাউন্সিল নেতৃবৃন্দকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে নানাভাবে কটূক্তি করেছে। এসব থেকে সহজেই সরাসরি জড়িত সন্ত্রাসীসহ তাদের পেছনের মদদদাতাদের খুঁজে বের করা সম্ভব বলে মনে করি।
একইসঙ্গে গুজববাজরা, পরীক্ষা বানচালকারীরা, ষড়যন্ত্রকারীরা ইতিমধ্যে মাঠে বিভিন্ন ধরণের গুজব ছড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে। আমি বেশকজন সাধারণ আইনজীবী থেকে শুনেছি, বার কাউন্সিলে টাকার বিনিময়ে খাতা জমা নেয়া হচ্ছে।
এছাড়াও টাকা দিয়ে খাতা বিক্রী, প্রশ্ন বিক্রী এবং পাশ করানোর মতো উদ্ভট সব গুজব পূর্ব থেকেই প্রচলিত আছে। এই গুজবে বলি হয়েছে অনেক সরলমনা সাধারণ পরীক্ষার্থী। আমার নিজের পরীক্ষার সময়ও এমন গুজবে কান দিয়ে আশ-পাশে থাকা বন্ধুদের অর্থিক ও পরীক্ষায় ক্ষতিগ্রস্থ হতে নিজ চোখে দেখেছি।
এসব কিছুই সাধারণ পরীক্ষার্থীদের জালে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্রকারীদের তৈরী করা নীলনক্সা। বার কাউন্সিল আইনজীবীদের অভিভাবক সংস্থা। তাই এ সংস্থা নিয়ে কটূক্তি করলে, ষড়যন্ত্র করলে, আমার খুব গায়ে লাগে। বার কাউন্সিল উপরোক্ত বিষয়ে বিশেষ নজর রাখবেন, সতর্ক থাকবেন এবং যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা রাখি।
বিশেষ উল্লেখ্য যে, গত ১৯/১২/২০২০ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মান এ-ক্লাস। ইতিপূর্বে এ ধরণের প্রশ্ন প্যাটার্নে আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষা হয়নি, হলেও কিঞ্চিৎ মিল থাকতে পারে। প্রশ্নপত্রের প্যাটার্ন নিয়ে স্থানীয় বারের নেতৃবৃন্দ, বিজ্ঞ আইনজীবীগণ, আইন শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। মান সম্মত পরীক্ষার জন্য এমন প্রশ্নপত্রই হওয়া চাই।
তবে, সাধারণ শিক্ষানবীস পরীক্ষার্থী যারা এবারের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন, তাদের কিছু কিছু পরীক্ষার্থীর সাথে কথা বলে বুঝতে পেরেছি, প্রশ্নপত্র টেকিনক্যাল হওয়ায়, তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রে কিছুটা নার্ভাস করেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীরা নিজ জ্ঞান, কোর্ট প্র্যাকটিসের উপর ভিত্তি করে উত্তর করেছে বলে জানিয়েছেন।
যেহেতু পরীক্ষার্থীরা পূর্বের পরীক্ষার প্রশ্নপ্রত্রের স্টাইল ফলো করে প্রিপারেশন নিয়েছে, সেহেতু ভিন্নধর্মী স্ট্যান্ডার্ড প্রশপত্র দেখে একটু নাভার্স হেয়েছে সেহেতু খাতা কাটার ব্যাপারে বার কাউন্সিল ও পরীক্ষকদের সুবিবেচনার জন্য একজন সদ্য পাশ করা সাধারণ আইনজীবী হিসেবে বিশেষ অনুরোধ করছি।
এছাড়াও, বার কাউন্সিল আইনজীবী তালিকাভূক্তি পরীক্ষা বছরান্তে নিয়মিত গ্রহণ করবেন, তালিকাভূক্ত আইনজীবীদের পেশাগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নিয়মিত সেমিনার, ওয়ার্কশপ, ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করবেন, ক্ষেত্রবিশেষে বাধ্যতামূলক ট্রেনিং গ্রহণের জন্যও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা করি।
অনাগত আইনজীবীদের প্রতি শুভকামনা রইলো। সবিশেষ, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
মোহাম্মদ আরিফ উদ্দীন চৌধুরী: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট