ওয়াজ-মাহফিল
ওয়াজ-মাহফিল

ওয়াজ-মাহফিল ও ধর্মীয় বক্তৃতায় কাল্পনিক গল্প নিষিদ্ধে আইনি নোটিশ

ওয়াজ-মাহফিল, ধর্মীয় বক্তৃতায় কাল্পনিক গল্প ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য নিষিদ্ধ করে পবিত্র কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থসমূহের রেফারেন্স বাধ্যতামূলক উল্লেখ পূর্বক ধর্মীয় বক্তৃতা প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

আজ সোমবার (১৮ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোঃ মাহমুদুল হাসান আইনি নোটিশটি প্রেরণ করেন। নোটিশে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব ও ইসলামী ফাউন্ডেশনের ডিজিকে বিবাদী করা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশ সংবিধানের ২ (ক) অনুযায়ী “প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম”। এখানে ইসলাম বলতে আমাদের সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত পবিত্র কোরআন ও সর্বশেষ নবী মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর হাদীসের নির্দেশনা বুঝাবে । অপরদিকে হাদীস হলো মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর বক্তব্য, তার কাজ ও তার মৌন সম্মতি।

আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ পৃথিবীতে যত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন তাদের প্রধান কাজ ছিল মানুষের কাছে আল্লাহর বাণী প্রচার করা। এছাড়া যেসব নবীগনের প্রতি আল্লাহ পবিত্র গ্রন্থ পাঠিয়েছেন তাদেরকে রাসূল বলা হয়।

কিছু উল্লেখযোগ্য নবী রাসুলের নাম হলো হযরত আদম (আ), হযরত নূহ (আ), হযরত ইউসুফ (আ), হযরত ইব্রাহিম (আ), হযরত মুসা (আ), হযরত ঈসা (আ), হযরত মুহাম্মদ (স)।

এদের মধ্যে ইহুদীরা হযরত মূসা (আ) কে অনুসরণ করে। অন্যদিকে খ্রিস্টানরা হযরত ঈসা (আ) কে অনুসরণ করে। অপরদিকে মুসলমানরা হযরত মুহাম্মদ (স) কে অনুসরণ করে।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীতে ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় বিভেদ থাকলেও সৃষ্টিকর্তা নিয়ে কোন বিভেদ নেই এবং তারা এক‌ই সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করে।

আমাদের আল্লাহ পৃথিবীতে অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন । এদের মধ্যে সর্বশেষ নবী-রাসূল হলো হযরত মুহাম্মদ (সা) । এজন্য মহানবী (সা) কে বলা হয় “খাতাম্যুন নাবীয়্যিন’ অর্থাৎ নবুয়্যতের সমাপ্তি।

যেহেতু মহানবী (স) সর্বশেষ নবী এবং এরপর আর কোন নবী আসবেন না, তাই ধর্মীয় প্রচারের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তার অনুসারীদের বা উম্মতদের উপর।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, আলেম বা ধর্ম প্রচারকগনের উপর অনেক পবিত্র দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক ভাবে দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে আমাদের আলেমগণ বিভিন্ন ধর্মীয় বক্তৃতা, ওয়াজ মাহফিলে বিভিন্ন কাল্পনিক বক্তব্য, গালগল্প ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।

পাশাপাশি বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া যেমন ইউটিউব, ফেসবুকের মাধ্যমে এসব বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে।

এছাড়াও বহুক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, আমাদের আলেমগণ বিভিন্ন ধর্মীয় বক্তৃতা, ওয়াজ মাহফিলে যথাযথ কোর‌আন হাদীসের রেফারেন্স উল্লেখ না করে নিজেদের মতো বক্তব্য দিয়ে সরকার, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিচ্ছেন এবং জনসাধারণের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করছেন ।

যেহেতু বাংলাদেশ সংবিধানের ২ (ক) অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। সেহেতু এই ইসলাম ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা করা এবং ইসলাম ধর্ম সঠিকভাবে প্রচার করা সরকারের আবশ্য পালনীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য।

সুতরাং বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল ও ধর্মীয় বক্তৃতায় যাতে বক্তাগণ পবিত্র কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ সমূহের রেফারেন্স উল্লেখ করে বক্তব্য দেন এবং রাষ্ট্র-বিরোধী বক্তব্য পরিহার করেন এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক।

অপরদিকে কাল্পনিক গল্প ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য শুনে যুবসমাজ যাতে উগ্রবাদ, রাষ্ট্রবিরোধী কাজে প্রভাবিত না হয় এজন্য শিক্ষা ব্যবস্থার সকল পর্যায়ে তথা প্রাইমারি থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পবিত্র কোরআনের অনুবাদ ও বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থসমূহের অনুবাদ পড়ানো বাধ্যতামূলক করতে হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

নোটিশ প্রেরণের বিষয়টি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে নিশ্চিত করে অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হাসান জানান, নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে পদক্ষেপ চেয়ে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে রিট দায়ের করা হবে।