সহোদর ৪ ভাই। বাবা-মার মৃত্যুর পর এক সময় সম্পত্তি নিয়ে এক ভাইয়ের সাথে অপরদের দ্বন্দ সৃষ্টি হয়। সেখান থেকে শুরু পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি। বিবাদ গড়ায় আদালত পর্যন্ত। পরিনতি দাঁড়ায় রক্তের সম্পর্ক থেকে চির বৈরিতা।
দলিলমূলে জমি বিক্রয়ের পরেও শুধু শত্রুতার কারণে দলিল জাল দাবি করে ২০১৭ সালে অপর তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে দলিল বাতিলের পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন এক ভাই। সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনায় একটি মামলা মিথ্যা ও হয়রানিকর মামলা বলে আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয়। আদালত মামলাটি হয়রানিকর উল্লেখ করে তা খারিজ করেন এবং বাদীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
জরিমানার টাকা ক্ষতিপূরন হিসেবে বিবাদীকে প্রদানেরও নির্দেশ দেন। অপর মামলাটিও দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগ গ্রহন করেন। কিন্তু, প্রথম মামলায় ক্ষতিপূরনের টাকা পরিশোধের নির্দেশ থাকলেও গড়িমসি করতে থাকেন বাদী। এরপর বাদী ঐ টাকা প্রদান না করায় বিবাদী ক্ষতিপূরনের টাকা আদায়ের জন্য আদালতে আবেদন করেন।
আদালতের বিচারক এস, এম, শরিয়ত উল্লাহ্ মিথ্যা মামলা দায়েরকারী বাদীর বিরুদ্ধে গত ৬ জানুয়ারি ক্ষতিপূরনের টাকা প্রদান না করায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী করেন। গ্রেফতারি পরোয়ানার পাশাপাশি আরেকটি মামলার ধার্য তারিখও সামনেই। আদালত এই মামলাটিও দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছেন। মিথ্যা মামলা হলে এটাতেও বাদীর জরিমানা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এবার নড়েচড়ে বসেন বাদী। চেষ্টা করেন ভাইদের সাথে আপোষ করে বিবাদ মিটিয়ে নেওয়ার।
স্থানীয় এবং পারিবারিকভাবে তারা বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করেন। এরপর উভয়পক্ষ আদালতে হাজির হয়ে নিজেদের মধ্যে সকল বিরোধ নিষ্পত্তির কথা জানান। প্রার্থনা করেন বাদীর বিরুদ্ধে ইস্যুকৃত গ্রেফতারী পরোয়ানা রিকল করার। একই সাথে বাদী তার ভাইদের বিরুদ্ধে চলমান অপর মামলাটিও প্রত্যাহার করে নেন।
১৯ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) পাবনার ঈশ্বরদী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে এই ঘটনা ঘটে।
বিরোধের সূত্র ধরে যেই আদালতে প্রায় ৪ বছর পরস্পর চরম শত্রু হিসেবে প্রতিদ্বন্বিতা করেছেন, আজ সেই আদালতেই সবাই উপস্থিত হয়ে পরস্পরকে আলিঙ্গন করে বাড়ির পথে যাত্রা শুরু করেন। উভয়পক্ষ বিজয়ী হিসেবে আদালতের আঙিনা থেকে বিদায় নেন। সব মামলায় একপক্ষ জয় লাভ করে, কিন্তু এই মামলায় জয় লাভ করেছে সবাই। আদালতের সক্রিয় উদ্যোগে শুধু সম্পত্তির বিরোধ নিষ্পত্তি নয় বরং পারিবারিক সম্পর্কও পুনপ্রতিষ্ঠিত হলো।
-আদালত প্রতিবেদক, পাবনা