সেলিনা বেগম (২৫) ও দিদারুল ইসলাম (৩৫) দুজনই কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। একে অপরকে ভালোবেসে পালিয়ে যান তারা। তারপর বিয়ে করে দুজন একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। তিনমাস পর সেলিনা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে স্বামী দিদারুল ইসলাম তাকে কৌশলে ফেলে পালিয়ে যান।
এই ঘটনায় সেলিনা কোনো উপায় না পেয়ে আশ্রয় নেন কক্সবাজারের চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকের কাছে। অসহায় সেলিনা বেগম স্ত্রীর স্বীকৃতি ও সন্তানের পিতৃপরিচয় চেয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে দিদারুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে পুলিশ দিদারুলকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান।
ওই ঘটনায় গত সোমবার বিকেলে আসামি পক্ষের আইনজীবী দিদারুল ইসলামের জামিন প্রার্থনা করেন। এ সময় চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাজীব কুমার দেব ভিডিও কনফারেন্সর মাধ্যমে আসামির সঙ্গে কথা বলতে চান। পরে জেল সুপার আসামি দিদারুল ইসলামের সঙ্গে আদালতের বিচারকের সঙ্গে কথা বলার আয়োজন করেন। উভয়পক্ষের আলাপ-আলোচনা শেষে আদালত একটি নির্দেশনা প্রদান করেন।
আদালত জেল সুপারের উপস্থিতিতে কারাগারে বিয়ের আয়োজন করে দিদারুল ইসলামের সঙ্গে সেলিনা বেগমকে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিয়ে পড়ানোর নির্দেশ দেন। এরপর দিদারুলকে মুক্তি দিয়ে আদালতকে বিষয়টি অবহিত করতেও বলা হয়।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী সেলিনা বেগমের আইনজীবী চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আইনজীবী মো.মিজবাহ উদ্দিন জানান, সেলিনা বেগমকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তাকে নিয়ে পালিয়ে যান দিদারুল ইসলাম প্রকাশ শকু। এরপর চকরিয়ার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তারা। এই সময়ে সেলিনা বিয়ের কাবিননামা সম্পাদন করতে চাপ দেন দিদারুলকে। কিন্তু দিদারুল ইসলাম কৌশলে সেলিনাকে ফেলে পালিয়ে যান।
তিনি আরও জানান, ওই অবস্থায় সেলিনা স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে ২০২০ সালে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। বিজ্ঞ বিচারক রাজীব দেব সেলিনার অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্তে উঠে আসে সেলিনা এবং দিদারুলে মধ্যে দীর্ঘ দিন শারীরিক সম্পর্ক হলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন সেলিনা। বিষয়টি আদালত আমলে নিয়ে আসামি দিদারুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। বর্তমানে দিদারুল ইসলাম কক্সবাজার কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
আসামি দিদারুল ইসলামের আইনজীবী মো. মুজিবুল হক বলেন, ‘আদালতে আসামির জামিন আবেদন করা হয়। আসামি জামিন পেলে পালিয়ে যেতে পারেন এমন আশঙ্কায় শুনানির সময় আদালতের বিচারক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার জেল সুপারের সঙ্গে সংযুক্ত হন এবং আসামি দিদারুলকে উপস্থিত করে তার স্বীকারোক্তি এবং সম্মতি নেন। এ সময় দিদারুল সেলিনাকে বিয়ে করবে বলে আদালতকে কথা দেন।’
আইনজীবী মুজিবুল হক আরও বলেন, ‘এসব শর্তে আসামির জামিন আবেদন মঞ্জুর করা হয়। এ ছাড়া জেল সুপারের উপস্থিতিতে কারাগারে দুইজনের মধ্যে ধর্মীয় রীতি মোতাবেক বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে আদালতকে অবহিত করারও আদেশ দেওয়া হয়।’
আদালতের এই আদেশ শুনে ভুক্তভোগী সেলিনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালতের এই আদেশের আমি খুব খুশি হয়েছি। আদালত এবং বিচারকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আদালতের বিজ্ঞ বিচারকের মানবিকতার কারণে আমি স্ত্রীর স্বীকৃতি এবং আমার সন্তান পিতৃপরিচয় পেতে যাচ্ছে।’