জেল-জরিমানা বিধান রেখে কৃষিজমির অপব্যবহার রোধে ‘কৃষি জমি (যথাযথ ব্যবহার ও সংরক্ষণ) আইন-২০২২’ নামে একটি বিল জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। বিলে জমির অপব্যবহার রোধে তিন বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন করেন জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান।
এ বিলটি আইন হলে কৃষিজমিকে কেউ অকৃষি কাজে ব্যবহার করতে পারবে না, তবে ব্যক্তিগত বসবাসের উদ্দেশ্যে নির্মিত বাড়ি, কবরস্থান, শ্মশান, অন্যান্য ধর্মীয় সৎকারের স্থান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।
প্রস্তাবিত আইনে যা বলা হয়
প্রস্তাবিত আইনে একটি তদারকি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। সরকারি গেজেট, প্রজ্ঞাপন দিয়ে প্রত্যেক উপজেলায় নিম্নবর্ণিত সদস্যের সমন্বয়ে একটি তদারকি কমিটি গঠন করবে সরকার।
কমিটির চেয়ারম্যান হবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এ ছাড়া কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন সংশ্লিষ্ট উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা, ভূমি কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তা, শিক্ষা কর্মকর্তা, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, সমবায় কর্মকর্তা, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, সমাজসেবা কর্মকর্তা, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। এই তদারক কমিটি মাসে কমপক্ষে একটি সভা করবে।
কোনো ব্যক্তি প্রস্তাবিত আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ডে অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এই আইনের ধারা ৪ লঙ্ঘন করে কোনো কৃষিজমিতে যদি কোনো শিল্পকারখানা স্থাপন, রাস্তাঘাট নির্মাণ, আবাসন ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট তদারক কমিটি নোটিশ দিয়ে জমির মালিককে অথবা বিধান লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিকে নোটিশে উল্লেখিত কৃষিজমিতে অননুমোদিত নির্মাণকার্য ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিতে পারবে। অন্য কোনো আইনে যা-ই থাকুক না কেন, নির্মাণকার্য ভাঙার জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না।
প্রস্তাবিত আইনের বিধান লঙ্ঘন করে কোনো নির্মাণকার্য সম্পাদিত বা অবকাঠামো তৈরি হয়ে থাকলে সব অবকাঠামো আদালতের আদেশে সংশ্লিষ্ট তদারক কমিটি বাজেয়াপ্ত করবে।
বিলটি আইন হলে কোনো বিধান লঙ্ঘনকারী যদি কোম্পানি হয়, তাহলে সে কোম্পানির মালিক, পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব বা অন্য কোনো কর্মকর্তা বা এজেন্ট বিধান লঙ্ঘন করেছেন বলে গণ্য হবে। যদি না তিনি প্রমাণ করতে পারেন যে সে লঙ্ঘন তার অজ্ঞাতসারে হয়েছে অথবা লঙ্ঘন রোধ করার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন, তাহলে একই শাস্তি ভোগ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, বেসরকারি বিল হিসেবে সংসদে এটি উত্থাপন হয়। বিলটি উত্থাপনের পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। রীতি অনুযায়ী জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার বেসরকারি দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সংসদে কোনো আইন করতে হলে সাধারণত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী বিল উত্থাপন করেন। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর বাইরে কোনো সংসদ সদস্য বিল আনলে সেটিকে বেসরকারি বিল বলা হয়।