সংসদ সদস্যদের (এমপি) নামের আগে অসাংবিধানিক শব্দ ‘সাংসদ’ ব্যবহার করায় আদালতে দুঃখ প্রকাশ করেছে প্রথম আলো। ফলে এ বিষয়ে দায়ের করা রিট উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ রোববার (২২ মে) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়ার নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব। অন্যদিকে প্রথম আলোর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান।
শুনানিতে প্রথম আলোর পত্রিকার আইনজীবী ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান আদালতে বলেন, লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার পর ৯ মে থেকে প্রথম আলো সংসদ সদস্যদের (এমপি) নামের আগে ‘সাংসদ’ শব্দের পরিবর্তে সংসদ সদস্য শব্দ লেখা শুরু করেছে। এসময় এতদিন সাংসদ শব্দ ব্যবহার করায় আদালতের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। পরে আদালত রিট আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন।
গত ১৮ মে হাইকোর্টে রিট আবেদনটির ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে প্রথম আলোর পক্ষের আইনজীবী এখন থেকে সংসদ সদস্য শব্দ ব্যবহার করা হবে বলে হাইকোর্টকে অবহিত করেন। পরে আদালতে দীর্ঘ দিন ধরে প্রথম আলো কেন সাংসদ শব্দ ব্যবহার করছে তার লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলেন। একইসঙ্গে রিটের আদেশের জন্য রোববার (আজকের) দিন ধার্য করেন আদালত।
এর আগে গত ১৬ মে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় সংসদ সদস্যদের (এমপি) নামের আগে ‘সাংসদ’ শব্দ ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করা হয়।
ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার ও ব্যারিস্টার মো. মাজেদুল কাদের হাইকোর্টে এ রিট দায়ের করেন।
প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব, আইন সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ ১০ জনকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
এর আগে একই বিষয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে বলা হয়, অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী সংবিধান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে ‘জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তি স্বরূপ এইসংবিধানের প্রাধান্য অক্ষুন্ন রাখা, ইহার সংরক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান আমাদের পবিত্র কর্তব্য।’
অনুচ্ছেদ ২১ অনুযায়ী সংবিধান ও আইন মান্য করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সর্বমোট ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের সমন্বয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ। সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের সদস্যদেরকে ‘সংসদ সদস্য’ হিসেবে অভিহিত করতে হবে। ইহা একটি সাংবিধানিক পদ এবং সংসদ সদস্যদের অন্য কোন নামে সম্বোধন করা অসাংবিধানিক।
কিন্তু বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা দীর্ঘদিন যাবৎ ‘সংসদ সদস্য’ শব্দ ব্যবহার না করে ‘সাংসদ’ শব্দ ব্যবহার করে আসছে। এটি বাংলাদেশ সংবিধানের চরম লংঘন, অবমাননা এবং চরম ধৃষ্টতা ছাড়া কিছু নয়। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার কর্তৃক রুলিং জারি করে বলা হয়েছে ‘সংসদ সদস্য’ একটি সাংবিধানিক পদ এবং ‘সাংসদ’ শব্দ ব্যবহারের সুযোগ নেই।
অথচ প্রথম আলো পত্রিকাটি সংবিধান এবং মাননীয় স্পিকারের রুলিং উপেক্ষা করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বহুদিন যাবত সংবিধান লংঘন করে আসছে যা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ক (১) (খ) অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহিতার সর্বোচ্চ দণ্ডনীয় অপরাধ।
কিন্তু বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা অব্যাহতভাবে অসাংবিধানিক ‘সাংসদ’ শব্দ ব্যবহার করে দেশ বিদেশের মানুষের কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছে। সংবিধান মান্যকরা প্রথম আলোর সাংবিধানিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
আইনি নোটিশে ‘সাংসদ’ শব্দ ব্যবহার না করে ‘সংসদ সদস্য’ শব্দ ব্যবহারের জন্য প্রথম আলোকে অনুরোধ করা হয়। একইসাথে প্রথম আলোর সম্পাদক এবং প্রকাশককে অসাংবিধানিক শব্দের ব্যবহার এর জন্য জাতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনার অনুরোধের পাশাপাশি পাঠকদেরকে উদ্দেশ্যে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের অনুরোধ করা হয়।
এছাড়া প্রথম আলো যাতে অসাংবিধানিক শব্দ ‘সাংসদ’ ব্যবহার না করে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে এবং প্রথম আলোর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে অপর বিদাদিদের অনুরোধ করা হয়েছিল। নোটিশ প্রাপ্তির পর উল্লেখিত সময়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নেওয়ায় রিট আবেদন করা হয়।