সুনামগঞ্জ থেকে মো. গিয়াস উদ্দিন : সুনামগঞ্জ আদালতে পুলিশের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায় এক পুলিশ সদস্যকে কাঠগড়ায় আটক রাখার আদেশ দিয়ে বিচারক নিজেই কিছু সময়ের জন্য আটক হয়ে গিয়েছিলেন। আটক পুলিশ সদস্য পিন্টুকে ছাড়িয়ে নিতে কোর্টে দায়িত্বরত অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা এজলাস কক্ষ ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
এসময় বিচারকের নাম ধরে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করার অভিযোগও উঠেছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এজলাস কক্ষের সকল দরজা বন্ধ করে চলে বিচার কার্যক্রম। এর প্রতিবাদ করলে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের সাথেও বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ে তারা।
সুনামগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতে গত সোমবার (৮ আগস্ট) দুপুর ২ ঘটিকার সময় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী ও বেঞ্চসহকারীদের নিকট থেকে জানা যায়, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতে তখন সাক্ষ্যগ্রহণ চলছিল। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন জিআর ৬৭/১৯ইং (সদর) মোকদ্দমার জব্দকৃত আলামত উপস্থাপন করার জন্য কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য পিন্টুকে নির্দেশ প্রদান করেন। এসময় পুলিশ সদস্য পিন্টু কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে।
পরে মালখানা থেকে আলামত নিয়ে এসে এজলাস কক্ষে বিচারকের সামনে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ শুরু করে। এ ঘটনায় আদালত ওই পুলিশ সদস্যকে কাঠগড়ায় আটক রাখার আদেশ দিলে আদালত পাড়ায় আবস্থানরত সকল পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং খবর পেয়ে পাশ্ববর্তী থানা ও শহর থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা কনষ্টেবল এসে জড়ো হয়।
এসময় উপস্থিত আইনজীবী ও সাংবাদিকগণ তাদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে ও ঘটনার ছবি তুলতে চাইলে আইনজীবী সাংবাদিক চ্যানেল ২৪ এর প্রতিনিধি এআর জুয়েল, যমুনা টেলিভিশনের প্রতিনিধি আমিনুল ইসলামের ক্যামেরা মোবাইল ফোন জোর পূর্বক ছিনিয়ে নেয়া হয়। একপর্যায়ে আইনজীবী ও সাংবাদিকগণও পুলিশের আক্রোশের সম্মুখীন হন।
আইনজীবীদের প্রতিবাদ সমাবেশ
এ ঘটনার প্রতিবাদে সুনামগঞ্জ আইনজীবী সমিতি কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক এক প্রতিবাদের আয়োজন করা হয়। আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল লেইছ রোকেশের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল তুহিনের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট হুমায়ূন মঞ্জুর চৌধুরী, অ্যাডভোকেট চান মিয়া, অ্যাডভোকেট মাসুক আলম, অ্যাডভোকেট সেরেনুর আলী, অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান সেলিম, অ্যাডভোকেট তৈয়বুর রহমান বাবুল, অ্যাডভোকেট হানিফ সোলেমান প্রমুখ।
পরে সুনামগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাইদসহ একদল উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা আইনজীবী সমিতিতে এসে পুলিশ সদস্য লুতফুর রহমান, আব্দুর রহমানসহ দায়ী অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন।
৪ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার
পরে এ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদকে প্রধান করে ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ। প্রত্যাহার করা ৪ পুলিশ সদস্য হলেন- এএসআই লুৎফুর রহমান, কন্সটেবল মুস্তাক, পিন্টু ও রহমান।
সাংবাদিক ও আইনজীবীদের সঙ্গে পুলিশের অসদাচরণের জন্য এক সহকারী উপ-পরিদর্শকসহ (এএসআই) পুলিশের ৪ সদস্যকে আদালতের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
প্রত্যাহার করা ৪ পুলিশ সদস্য হলেন- এএসআই লুৎফুর রহমান, কন্সটেবল মুস্তাক, পিন্টু ও রহমান।
প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ বলেন, বিজ্ঞ আদালতে সাংবাদিক ও পুলিশের মধ্যে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে সেটার তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থে তাদেরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে আদালত থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।