সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ঝড় তোলা সিনেমা ‘হাওয়া’। মুক্তির আগেই সিনেমা হলে সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। প্রধান চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত ও মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত হাওয়া ছবিটি সব আগ্রহ ও উদ্দীপনাকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় দুই সপ্তাহজুড়ে দর্শকরা হাওয়ায় ভাসছেন। সিনেমাটির গান ‘তুমি বন্ধু কালা পাখি’ জনপ্রিয়তার অনন্য উচ্চতায়। কিন্তু তুমুল আলোচনার মধ্যেই এবার সিনেমাটির বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, হাওয়া সিনেমাটিতে একটি শালিক পাখিকে খাঁচায় প্রদর্শন ও হত্যা করে খাওয়ার চিত্র দেখানো হয়েছে। এতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন হয়েছে দাবি করে হাওয়া চলচ্চিত্রের প্রদর্শন বন্ধের দাবি জানায় পরিবেশবাদী ৩৩টি সংগঠন।
তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বিকেলে সিনেমাটি দেখেছে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে জানিয়ে বন বিভাগ জানায়, এ বিষয়ে তারা আইনি ব্যবস্থা নেবে। তবে চলচ্চিত্রের পরিচালক বলছেন, ‘ফিকশন’ হিসেবে ওই দৃশ্য দেখানো হলেও কোনো বন্যপ্রাণী হত্যা করা হয়নি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর পান্থপথে স্টার সিনেপ্লেক্সে সিনেমাটি দেখে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের ওয়াইল্ডলাইফ ইন্সপেক্টর অসীম মল্লিক বলেন, সিনেমাটিতে খাঁচায় একটি শালিক পাখি দেখানো হয়েছে। কিন্তু যেটা খাওয়া হয়েছে, সেটি আসলে শালিক পাখির মাংস কি-না, তার তদন্ত প্রতিবেদন অধিদপ্তরে পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, এটি সত্যিকারের পাখি। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিরাপত্তা আইন এখানে লঙ্ঘন হয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথিন্দ্রকুমার বিশ্বাস বলেন, সেন্সর বোর্ড কী করেছে, সেটা আমাদের কর্তৃপক্ষ বুঝবে। আমরা সিনমাটি দেখে আমাদের কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করব। তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী শালিক সংরক্ষিত প্রাণী। এ জাতীয় পাখি বা প্রাণী খাঁচায় আটকে শুটিং বা প্রদর্শন করতে হলে বন বিভাগের অগ্রিম অনুমতি থাকতে হয়।
এর আগে একটি নাটকে খাঁচাবন্দি টিয়া পাখি দেখানোর ৪৫ সেকেন্ডের দৃশ্য থাকায় পরিচালকের বিরুদ্ধে গত এপ্রিল মাসে ১৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। ওই মামলাটি এখনও বিচারাধীন আছে।
এছাড়া বাংলাদেশে একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির বিজ্ঞাপন চিত্রে খাঁচাবন্দি টিয়া পাখি দেখানোয় গত বছরের জুলাই মাসে মামলা করেছিল বন বিভাগ। এরপর ওই কোম্পানি বিজ্ঞাপন চিত্রটি সরিয়ে নেয়।
পাখি ধরার খাঁচা বিক্রির অভিযোগে বড় একটি অনলাইন পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছিল। সরাসরি বন্যপ্রাণী আটকে রাখা বা উদ্ধার হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা বা কারাদণ্ড দেওয়ার উদাহরণও আছে।
বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোটের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, হাওয়া সিনেমায় পাখিকে খাঁচায় বন্দি ও হত্যার দৃশ্য দেখানোর মাধ্যমে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। এ ধরনের অপরাধ চিত্রায়নের কারণে সাধারণ মানুষ সংরক্ষিত প্রাখিদের খাঁচায় পোষা, হত্যা করে খাওয়া ও মাছ শিকারে উৎসাহিত হবে। এই দৃশ্য ধারণের জন্য বন বিভাগের অনুমতি নেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, চলচ্চিত্রটি হাজার হাজার মানুষ দেখেছে। তাদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা যাবে, এ জাতীয় কাজ করা যায়। ধূমপানের দৃশ্যে যেমন লেখা থাকে, এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি ওই দৃশ্যটিতে কোনো বার্তা ছিল না।
অভিযোগের বিষয়ে হাওয়া সিনেমার পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন বলেন, চলচ্চিত্রে একটি নেতিবাচক চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে খাঁচায় আটকানো শালিক পাখি এবং সেটিকে খাওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়েছে। কিন্তু খাওয়ার দৃশ্য আসল নয়। সেখানে আসলে মুরগি খাওয়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, এখানে পজিটিভভাবে চরিত্রটা দেখানো হয়নি। একটি নেতিবাচক চরিত্রের, খারাপ মানুষের দৃশ্যায়নের অংশ হিসেবে পুরো ঘটনাটি দেখানো হয়েছে। ফলে সেটা দেখে কেউ এ ধরনের কাজে উৎসাহিত হওয়ার কারণ নেই।
সূত্র : সমকাল