পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় আছেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আমিনুল গণী (টিটো) সহ তিন জন আইনজীবী। ইতোমধ্যে নিরাপত্তা চেয়ে সমিতির কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বরাবর চিঠি দিয়ে এ আবেদন জানান অ্যাডভোকেট আমিনুল গণী (টিটো)।
বিষয়টি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন টিটো অ্যান্ড এসোসিয়েট সদস্য ও আইনজীবী আমিনুল গণীর জুনিয়র অ্যাডভোকেট আশরাফুল করিম সাগর। তিনি জানান, আবেদনের অনুলিপি প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারের কাছেও প্রেরণ করা হয়েছে।
চিঠির ভাষ্য মতে, এদিন ঢাকার দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এজলাসে একটি মামলার আসামী পক্ষে জেরা করছিলেন অ্যাডভোকেট আমিনুল গণী। এসময় বাদী পক্ষের মোকাররম হোসেন জিমি সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো বাদীকে ইশারা-ইঙ্গিতে জেরার উত্তর সরবরাহ করছিলেন।
এ প্রেক্ষিতে এজলাসে উপস্থিত আইনজীবী মো. সেলিম হোসেন ও ইসতিয়াক উদ্দিন উত্তর সরবরাহে ওই ব্যক্তিকে বাঁধা দেন। এতে মোকাররম হোসেন জিমি ক্ষিপ্ত হয়ে বিচার কক্ষেই চেঁচামেচি শুরু করেন। বিষয়টি বিচারকের দৃষ্টি গোচর হলে বহিরাগত বিবেচনায় ওই ব্যক্তিকে এজলাস থেকে বের হয়ে যাওয়ার আদেশ দেন আদালত।
জেরা শুনানি শেষে অ্যাডভোকেট আমিনুল গণী এজলাস থেকে বের হওয়ায় সময় দরজার কাছে দাঁড়িয়ে মোকাররম হোসেন জিমি পুলিশ অফিসার নাজমুলকে সাথে নিয়ে উত্তর সরবরাহে বাঁধা প্রদানকারী দুই আইনজীবীর ছবি মুঠোফোনে ধারণ করেন ও তাঁদের গ্রেফতারের উদ্যোগ নেন।
এতে বাঁধা দেওয়ায় পুলিশ সদস্যরা এবং বহিরাগত ওই ব্যক্তি অ্যাডভোকেট আমিনুল গণীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকি-ধামকি দেন। এসময় উপস্থিত আইনজীবীরা প্রতিবাদ করেন এবং দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এজলাসে প্রবেশ করে বিচারককে বিষয়টি অবহিত করেন।
আদালতের কাছে ঘটনা বর্ণনার সময়ও ওই বহিরাগত ব্যক্তি আইনজীবী আমিনুল গণীকে বিচারকের সামনেই চুপ থাকার হুমকি দেন। পরিস্থিতি শামাল দিতে বিচারক সকলকে শান্ত হওয়ার আদেশ দেন। পাশাপাশি পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুল ও বহিরাগত জিমিকে বিচারকের সেরেস্তায় অবস্থান করার আদেশ দেন।
বিচারকের নির্দেশের প্রতি সম্মান জানিয়ে আইনজীবীরা শান্ত হন। পরবর্তীতে বিচারকের সেরেস্তায় পৌঁছে আইনজীবীরা পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুল ও বহিরাগত জিমিকে খুঁজে পাননি।
এ ঘটনা বর্ণনা করে ঢাকার দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নির্দেশে একটি দরখাস্ত পেশ করেন আইনজীবীরা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক অবগত আছেন। তবে এ ঘটনায় অ্যাডভোকেট আমিনুল গণী (টিটো) সহ উল্লেখিত আইনজীবীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী অ্যাডভোকেট আশরাফুল করিম সাগর ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে জানান, প্রথমত বিচারিক কার্যক্রমে অনৈতিকভাবে জিমি নামের ব্যক্তি বাদীকে ইশারা-ইঙ্গিতে তথ্য সরবরাহ করছিলেন। বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিগোচর হলে তাঁকে এজলাস থেকে বের করে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, আইনজীবীরা এজলাস থেকে বের হওয়ায় সময় দরজায় পুলিশ এনে জিমির এমন কান্ড পেশাগত দায়িত্বপালনে হস্তক্ষেপ বলে মনে করি। পুলিশ কর্মকর্তা আইনজীবীদের ছবি তুলেন ও গ্রেফতার করতে উদ্যত হন যা মোটেও আইনসিদ্ধ নয়।
অ্যাডভোকেট সাগর বলেন, কেননা ওই পুলিশ কর্মকর্তা এই মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়ই, বরং স্বপ্রণোদিত হয়ে এজলাস সামনে কোনো কারণ ছাড়াই আইনজীবীদের সাথে এমন ব্যবহার করা এক ধরনের হয়রানি।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট আদালতেও দরখাস্ত পেশ করেছি। দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক বিষয়টি জেলা ও দায়রা জজ মহোদয়কে অবহিত করেছেন। আশা করছি দ্রুতই এ বিষয়ে বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মহোদয় সিদ্ধান্ত জানাবেন।
তিনি আরো বলেন, পেশাগত দায়িত্বপালন করতে গিয়ে আইনজীবীদের এমন হেনস্তার শিকার হতে হলে ন্যায় বিচার নিশ্চিতের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। আইনজীবীরা নিরাপদ বোধ না করলে আদালতকে সহযোগিতা করা সম্ভব হবে না। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।