জয়নাল আবেদীন মাযহারি : Arbitration is a form of alternative dispute resolution that resolves disputes outside of the courts by the consent of disputed parties. তার মানে আরবিট্রেশন বা সালিস হল বিরোধে জড়িত বা জড়িত হওয়ার আশঙ্কায় পক্ষগনের সম্মতি সাপেক্ষে বিকল্প পদ্ধতিতে আদালতের বাইরে বিরোধ সমাধান করা।
এ বিরোধ সমাধা করেন মাতবর বা স্থানীয় গণ্যমান্যদের নিয়ে গঠিত বিচারক সভা। সালিস মূলত পাড়া ও গ্রামভিত্তিক স্থানীয় লোকসমাজের বিচার। প্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলে প্রধানত যে দু’ধরনের বিচারব্যবস্থা প্রচলিত তার একটি হলো সালিস, অন্যটি হলো সুনির্দিষ্ট আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিচার বিভাগীয় শাখার কার্যক্রম।
সাধারণত কোনো সালিস প্রক্রিয়ার শুরু হয় বাস্তব তথ্যগুলি কি কি তা নির্ধারণের জন্য বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষকে জেরার মাধ্যমে। সালিসকারগণ বিরোধে জড়িত উভয় পক্ষের অভিমত গ্রহণের পর তাঁদের রায় প্রদান করেন। উক্ত বিষয়ে কিছু মামলা ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পক্ষদেরকে আদালত উৎসাহিত করে থাকেন। সচেতন সকল আইনজীবীগণও উক্ত বিষয়ে সহমত পোষন করবেন।
স্বাভাবিক সুবিচারের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে সালিসে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পক্ষ সংঘাতে না গিয়ে সমঝোতায় উপনীত হতে আগ্রহী হবার কথা। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে উক্ত বিষয়ে পক্ষদের মধ্যে চরম অলসতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এর কারণ হিসেবে আমরা বলতে পারি ক্ষমতাকাঠামো, কখনো বা ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলের সালিস স্বার্থান্বেষী মহলের অস্ত্র হিসেবেই কাজ করে বলে পক্ষগণ তাদের কাঙ্খিত ফলাফল না পাওয়াই এর প্রধান কারন হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। উক্ত ফর্মূলায় অবৈধ আর্থিক লেনদেনকারী জয়লাভ করা এবং অপেক্ষাকৃত দুর্বল পক্ষ শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরন করাটা আমাদের রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
সালিস ব্যবস্থায় ভালো ফলাফলের সূত্র
প্রথমে পক্ষদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান চান। সে ক্ষেত্রে শান্তির লক্ষ্যে পক্ষদেরকে কিঞ্চিত ছাড় দেওয়ার মানিুষকতা একটি সমস্যার সুন্দর সমাধান এনে দিতে পারে। তারপর পক্ষদের উচিৎ হবে শিক্ষিত এবং বিচক্ষ গন্যমান্য ব্যক্তির দ্বারস্থ হওয়া। এ ক্ষেত্রে লক্ষনীয় বিষয় হলো এমন ব্যক্তির ধারস্থ হওয়া যাবে না যিনি নিজেই একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি।
দুর্নীতিগ্রস্ত কিনা কিভাবে বুজবেন? তাকে পরখ করতে হবে তার ঘর দিয়ে। অর্থাৎ তিনি তার বোন ভাই এলাকাবাসী এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে নীতি ঠিক রেখেছে কি না? ভাইকে নিম্ন মানের সম্পত্তি দিয়ে তিনি উচ্চ মানের সম্পত্তি নিয়েছে কি না? পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত বোনের পাওনা পরিশোধ করেছে কি না ইত্যাদি। উক্ত সকল প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে আপনি নিশ্চিত ধরে নেন আপনি একজন ভালো সালিসদার পেয়েছেন এবং উক্ত সালিসের একটি চমৎকার ফলাফল পেতে যাচ্ছেন।
যে সকল বিষয়ে সালিস করার চেষ্টা করবেন না
খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মারাত্মকভাবে কাউকে আঘাত করা, মাদককের সাথে জড়িত, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত, ডাকাতি। উক্ত সব বিষয়ের সমাধান আদালত কতৃক করুন। সাবধান! আপনার যদি আশঙ্কা হয় এই সালিসে আপনি ন্যায় বিচার পাবেন না তাহলে সালিসে বসা থেকে বিরত থাকুন।
লেখক: সমাজ কর্মী এবং আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও জজ কোর্ট, কুমিল্লা। ই-মেইল: joinalmajhari@gmail.com