পেশাগত দায়িত্ব পালন করায় ঢাকা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র অ্যাডভোকেট আমিনুল গনি টিটু’কে আদালত চত্বরে ক্রস ফায়ারের হুমকি প্রদানের ঘটনায় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
একইসাথে, উক্ত ঘটনায় হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন করে দ্রুত সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক দায়ী পুলিশ অফিসারকে চিহ্নিত করে বিভাগীয় ও ফৌজদারী আইনে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহনের আহবান জানিয়েছে জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ।
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় যে, গত ০৭ ফেব্রুয়ারী তারিখে ঢাকার দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত এজলাসে একটি মামলায় আসামি পক্ষে জেরা করছিলেন অ্যাডভোকেট আমিনুল গণী। সে সময় বাদী পক্ষের জনৈক মোকাররম হোসেন জিমি সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো বাদীকে ইশারা-ইঙ্গিতে জেরার উত্তর সরবরাহ করছিলেন।
তার পরিপ্রেক্ষিতে এজলাসে উপস্থিত আইনজীবী মো. সেলিম হোসেন ও ইসতিয়াক উদ্দিন উত্তর সরবরাহে ওই ব্যক্তিকে বাধা প্রদান করেন। তাতে উক্ত ব্যক্তি ক্ষিপ্ত হয়ে বিচার কক্ষেই চেঁচামেচি শুরু করে। বিষয়টি বিচারকের দৃষ্টি গোচর হলে বহিরাগত বিবেচনায় উক্ত ব্যক্তিকে এজলাস থেকে বের হয়ে যাওয়ার আদেশ দেন আদালত।
পরে জেরা শুনানি শেষে অ্যাডভোকেট আমিনুল গণী এজলাস থেকে বের হওয়ায় সময় দরজার কাছে দাঁড়িয়ে মোকাররম হোসেন জিমি পুলিশ অফিসার নাজমুলকে সঙ্গে নিয়ে উত্তর সরবরাহে বাধা প্রদানকারী দুই আইনজীবীর ছবি মোবাইল ফোনে ধারণ করেন ও তাদের গ্রেফতারের উদ্যোগ নেন।
তাতে বাধা দেওয়ায় পুলিশ সদস্যরা এবং বহিরাগত ওই ব্যক্তি অ্যাডভোকেট আমিনুল গণীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি প্রদান করে। সেসময় উপস্থিত আইনজীবীরা প্রতিবাদ করেন এবং দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এজলাসে প্রবেশ করে বিচারককে বিষয়টি অবহিত করেন।
জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও বিশিষ্ট মানবাধিকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে ঘটনার সাথে জড়িত আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহীনির সদস্য সহ অন্যান্যদের চিহ্নিত করে বিচারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জোর দাবী জানিয়েছেন। পাশাপাশি ভুক্তভোগী আইনজীবী ও তার পরিবারের পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবী জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম।
অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম মনে করেন শুধুমাত্র পেশাগত কার্য পরিচালনা করায় পুলিশ কর্তৃক আদালত চত্ত্বরে একজন আইনজীবীকে তুলে নিয়ে ক্রস ফায়ারে হত্যার হুমকি প্রদান করার মত ন্যাকারজনক ঘটনা আইনের শাসন ও বিচার ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর নামান্তর। উক্ত ঘটনা গণপ্রজাতন্ত্রিক বাংলদেশ সংবিধান এবং আইনজীবীদের পেশাগত স্বাধীনতা সম্পর্কিত জাতিসংঘ ঘোষিত মূলনীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম দৃঢ় বিশ্বাস করেন।
তাছাড়া, আদালত চত্ত্বরে আইওনজীবীকে ক্রস ফায়ারে হুমকি দেয়ার ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং সারা বাংলাদেশে আইনজীবীদের উপর সংঘটিত শারীরিক আক্রমণ, গ্রেফতার, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন, হত্যা, ক্রস ফায়ারের হুমিক একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানুয়ারী মাসে কেরানীগঞ্জে অ্যাডভোকেট রশিদ মোল্লাকে নির্মম্ভাবে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা, অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন রাজনকে ডাকায় পুলিশ তুলে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করে মিথ্যা মামলায় জেলহাজতে প্রেরণ এবং বিশিষ্ট পরিবেশ আইনজীবী ও তার দলের উপর চট্রগ্রামে আক্রমনের ঘটনাগুলো একইসূত্রে গাঁথা বলেই অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম মনে করেন।
সর্বপরি, অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম আইনজীবীদের পেশাগত মর্যাদা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আইনজীবীদের পেশাগত স্বাধীনতার সংক্রান্ত জাতিসংঘ ঘোষিত মূলনীতির আলোকে আইনজীবী সুরক্ষা আইন প্রণয়নের জোড় দাবী জানিয়েছেন।