প্রথম দিনের হট্টগোল, হইচই ও ধাক্কাধাক্কি, ধাওয়া পাল্ট ধাওয়া, পুলিশের লাঠিচার্জ ও ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনার পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দ্বিতীয় ও শেষ দিনের ভোটগ্রহণ চলছে।
দ্বিতীয় দিনের নির্বাচনের ভোট আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকাল ১০টার পর থেকে শুরু হয়েছে। চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তবে ভোটকেন্দ্রের সামনে আওয়ামী লীগের সমর্থক আইনজীবীদের দেখা গেলেও বিএনপিপন্থীদের দেখা যায়নি।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনের দ্বিতীয় দিনে দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান নিয়েছেন।
আজ সকালে আদালত চলাকালীন বিএনপিপন্থিরা ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল (বুধবার) ঘটে যাওয়া আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ ও নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন। পাশপাশি এ ঘটনায় বিচার দাবি করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
এরপর প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগের বিরতির সময় তাদের সঙ্গে খাস কামরায় দেখা করেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা কোর্ট অফিসার। আমরা আপনাদের সম্মান করি। এখন আদালতে মামলা শুনব। আপনারা দুইজন (ব্যারিস্টার খোকন ও কাজল) বেলা ১১টার সময় খাস কামরায় আসুন। আপনাদের কথা শোনা হবে। প্রয়োজনে অ্যাটর্নি জেনারেলকেও ডেকে আনব।
প্রথম দিন যা হল
এর আগে গতকাল বুধবার নির্বাচনের প্রথম দিন সকালে নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। হট্টগোলের কারণে নির্ধারিত সময় সকাল দশটায় ভোট গ্রহণ শুরু করা যায়নি।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মিলনায়তনের ভেতর থেকে পুলিশ বের করে দেয়। এ সময় পুলিশের লাঠিপেটায় আইনজীবী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। তবে বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা পর ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
আরও পড়ুন : সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে প্রথম দিনে ভোট পড়েছে ২২১৭
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এলে বেলা ১২ টার দিকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগ অংশের মনোনীত উপ কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ভোট শুরু হয়। এ নিয়ে দিনভর সমিতি ভবন ও প্রাঙ্গনে উত্তেজনা বিরাজ করে।
এদিকে বিকেল তিনটার দিকে প্রেস ব্রিফিং করেন বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থী। এরপর সাড়ে তিনটার দিকে তারা মিছিল নিয়ে সমিতি প্রাঙ্গনে থাকা ভোটের প্যান্ডেলের দিকে আসে। এরপর এক পর্যায়ে প্যান্ডেল ভাঙচুর, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর পর পরই আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা শ্লোগানসহ পাল্টা মিছিল করে।
অন্যদিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সমিতি ভনের মিলনায়তনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ সময় সমিতি ভবন ও প্রাঙ্গনে পুলিশের সরব উপস্থিতি দেখা যায়। এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সমিতির দুদিন ব্যাপী ভোট গ্রহণের প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপ–কমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান মনির বলেন, প্রার্থীসহ বিএনপিপন্থীদের আপত্তির কারণে ভোট গ্রহণ শুরু করতে দুই ঘণ্টা দেরি হয়। সমিতি প্রাঙ্গনে বিএনপিপন্থীরাই ভোটের প্যান্ডেল ভেঙেছে।
আরও পড়ুন : ব্যালট পেপার চুরি ও ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের নামে মামলা
পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর ১২ টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। এবারের নির্বাচনে ৮৬০২ জন ভোটারের মধ্যে প্রথম দিন ২২১৭ ভোট পড়েছে বলে জানান আসাদুজ্জামান মনির।