রকেটের গতিতে মামলা তদন্ত : পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের নির্দেশ
হাইকোর্ট

থ্যালাসেমিয়ার বিস্তার রোধে নীতিমালা তৈরির নির্দেশ হাইকোর্টের

বিবাহ রেজিস্ট্রি ফরমে বর-কনের থ্যালাসেমিয়া রোগ সম্পর্কিত তথ্য লিপিবদ্ধ করতে কেন একটি কলাম যুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ সোমবার (৩১ জুলাই) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

একই সঙ্গে বংশগত রক্তের রোগ থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হবে না, তাও রুলে জানতে চেয়েছেন আদালত।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্যের মহাপরিচালকসহ মোট ৮ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া থ্যালাসেমিয়া রোগের বিস্তার বন্ধে নীতিমালা তৈরি করতে ৩০ দিনের মধ্যে ৭ সদস্যবিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই কমিটিকে ৬ মাসের মধ্যে নীতিমালা তৈরি করে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পাশপাশি এই রোগের বিস্তার রোধে সাধারণ জনগণ, ছাত্রছাত্রী, সরকারি কর্মচারী এবং অন্যান্য পেশাজীবীদের মাঝে প্রচার চালনোরও নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ ও তৌফিক সাজওয়ার পার্থ।

রিটের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সোমবার শুনানিতে বলেন, “থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক ব্যক্তিদের মধ্যে বিয়ে হলে সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং তাদের বেঁচে থাকার জন্য নিয়মিত নিরাপদ রক্তের প্রয়োজন হয়। এভাবে একটি শিশুকে বাঁচিয়ে রাখতে পরিবার আথির্কভাবে নিঃস্ব হয়ে যায়।

“সচেতনতার অভাবে দিন দিন এ রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সে কারণে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করে দুই বাহকের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করার জন্য সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।”

থ্যালাসেমিয়ার বিস্তার ঠেকানোর নির্দেশনা চেয়ে রিট

এর আগে গত ১৫ জুন থ্যালাসেমিয়া রোগের বিস্তার বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে থ্যালাসেমিয়া রোগ বিস্তার নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্ট সংযুক্ত করে জনস্বার্থে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) এ রিট আবেদন দায়ের করে। রিট পিটিশনার হলেন, অ্যাডভোকেট মো. ছারওয়ার আহাদ চৌধুরী এবং অ্যাডভোকেট এখলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া।

রিটে থ্যালাসেমিয়া রোগ বিস্তার রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের কেন নির্দেশনা প্রদান করা হবে না এবং বিবাহ রেজিস্ট্রি ফরমে বর-কনের থ্যালাসেমিয়া রোগ সম্পর্কিত তথ্য কেন লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হবে না এই মর্মে রুল জারি করার আবেদন জানানো হয়।

এছাড়া রিটে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগ বন্ধে গাইডলাইন তৈরি করার জন্য ৭ সদস্য বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন এবং কমিটির ড্রাফট গাইডলাইন ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

একইসঙ্গে থ্যালাসেমিয়া রোগ বিস্তার রোধে ছাত্র-ছাত্রী, সাধারণ জনগণ, সরকারি কর্মচারী ও অন্যান্য পেশার মানুষদের মাঝে প্রচার-প্রচারণা চালানোর জন্য বিবাদীদের ওপর নির্দেশনা চাওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিববৃন্দ, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য মহাপরিচালকসহ মোট ৮ জনকে রিটে বিবাদী করা হয়।

১ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি মানুষ থ্যালাসেমিয়া বাহক বা রোগী

দেশের বিভিন্ন চিকিৎসা বিষয়ক জার্নালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি অর্থাৎ ১ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি মানুষ থ্যালাসেমিয়া বাহক বা রোগী। এছাড়া প্রতি বছর আরও ৭ হাজারের বেশি শিশু ত্রুটিপূর্ণ জিনসহ জন্মগ্রহণ করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানের ১০ শতাংশ বাহককে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আগামী ৫০ বছরে এই সংখ্যা ৫০ শতাংশে উন্নীত হবে, যা দেশের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনবে।

২০১৭ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর শুধু রক্ত সঞ্চালনের জন্যই তার পরিবারকে বছরে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা খরচ করতে হয়।

এ রোগের আরেক ধরনের চিকিৎসা হল অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং দেশে এখন পর্যন্ত কেবল দুজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব হয়েছে।