আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণকারী ও সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নবনির্মিত ১৫তলা ভবন উদ্বোধন করা হয়েছে। সরকার পক্ষ থেকে এই ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দসহ ভবন নির্মাণের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে তাতে অনাপত্তি আদায়ে যে মানুষটির অবদান অনস্বীকার্য তিনি আর কেউ নন, গরীবের আইনজীবী খ্যাত প্রয়াত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার।
তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা ফসল হিসেবে ২০১৮ সালের ২৬ জুন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বহুতল (১৫ তলা) ভবন নির্মাণ প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন দেন একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেদিনই বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার তাঁর ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করে দেশের ৫০ হাজার আইনজীবীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন।
বর্তমান কমিটির নির্বাচিত সদস্য ও কমপ্লেইন্ট এন্ড ভিজিলেন্স কমিটির চেয়ারম্যান এবং তাঁর সুযোগ্য সন্তান মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ (রাজা) বার কাউন্সিল ভবন নির্মাণের নেপথ্যে পিতার অনস্বীকার্য অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘একটি লেখা লিখে গেলেন বাবা বার কাউন্সিল পরবর্তী কমিটিকে দিয়ে যাবেন এমন একটি চিন্তা ছিল, কিন্তু তার আগেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন।’
সাঈদ আহমেদ রাজার স্ট্যাটাসে উল্লেখিত প্রয়াত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদারের লেখার কিয়দাংশ নিম্নরূপ-
বহু স্বপ্ন, বহু চিন্তাভাবনা করে দেখলাম দীর্ঘদিন আইনজীবীদের সাথে কাটিয়ে দিলাম অনেকগুলো বছর। এবার তো একটু আইনজীবীদের জন্য সর্বশেষ কাজটি করতে পারি তাই চিন্তা করে কাগজ-কলম হাতে নিয়ে লেখা শুরু করলাম।
প্রথমেই আলোচনা করলাম মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে। রাষ্ট্রপতি বললেন, নিয়ে আসেন মজুমদার সাহেব আমি ব্যবস্থা করে দিব। একটি আবেদন লিখলাম, চলে গেলাম রাষ্ট্রপতির বঙ্গভবনের বাসায়। রাষ্ট্রপতির রিকমেন্ডেশন, প্রধানমন্ত্রী তা অনুমোদন করে দিলেন।
সকল প্রক্রিয়া শেষ করে একনেক মিটিংয়ে প্রস্তাবটি উঠলো। সেই মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী আমাকে উপস্থিত থাকতে বললেন। সকালবেলা ঐদিন চলে গেলাম একনেক মিটিংয়ে। মিটিং শেষ করে সুপ্রিম কোর্টে এসে চেম্বারে বসলাম। ততক্ষণেই চিঠি চলে আসলো ভবনের অনুমোদন।
আইনজীবীদের জানিয়ে দিলাম বার কাউন্সিলের বহুতল বিশিষ্ট একটি আধুনিক ভবন অনুমোদন দিয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সারাদেশে আইনজীবীরা প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। এরই মাঝে শুরু হয়ে গেল বিশ্ব মহামারী করোনা। একটু চিন্তিত হয়ে গেলাম, যাহোক অবশেষে কাজটি শুরু হলো। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে আধুনিক ভবনে আমরা কাজ করতে পারব।
সাঈদ আহমেদ রাজা আরো লিখেন, ‘লেখাটি আর দিয়ে যাওয়া হলো না বর্তমান কমিটিকে শেষ করতে পারল না পরবর্তী কার্যক্রম। বাবা তুমি যেখানেই থাকো প্রধানমন্ত্রী সেই আধুনিক ভবন উদ্বোধন করে দিয়েছেন আর আইনজীবীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছেন।
সাঈদ আহমেদ রাজা লিখেন, ‘তোমার আইনজীবীরা তোমাকে কখনো ভুলবে না। হৃদয় তোমাকে স্থান করে দিয়েছেন, এজন্যই তুমি জীবনের সর্বোচ্চ সম্মান নিয়ে দুনিয়া থেকে চলে গেলে। রাব্বির হাম-হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি ছাগিরা।’
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীতে ১৩৮ কোটি টাকা খরচে নবনির্মিত ১৫ তলাবিশিষ্ট বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবন উদ্বোধন করেছেন। এই ভবনে রয়েছে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা।
গতকাল শনিবার (২১ অক্টোবর) প্রধান অতিথি হিসেবে হাইকোর্টসংলগ্ন স্থানে নির্মিত উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন শেষে প্রধানমন্ত্রী এই ভবনের উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি ভবনের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।
এর আগে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
এই ভবনে প্রশস্ত অফিস স্পেস, মিটিং রুম, দুটি কনফারেন্স রুম, রেকর্ড রুম, স্টোর রুম, ওয়েটিং এরিয়া, ক্যাফেটেরিয়া, ডে কেয়ার সেন্টার, প্রদর্শনী স্থান, রেজিস্ট্রেশন রুম, ব্যাংক, অ্যাকাউন্টস বিভাগ, আইটি বিভাগসহ অন্যান্য সুবিধা রয়েছে। টিভি লাউঞ্জ, রান্নাঘর, ডাইনিং হলসহ বার ভবনে শতাধিক আইনজীবী থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
আইন ও বিচার বিভাগের তত্ত্বাবধানে নির্মিত এবং স্থাপত্য বিভাগের নকশাকৃত ভবনটিতে পাঁচটি ট্রাইব্যুনাল কক্ষ, মাল্টিপারপাস হল ও আলাদা প্রার্থনা কক্ষ রয়েছে।