সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারকের অভাবে মামলা নিষ্পত্তির জন্য বেঞ্চ কমিয়ে একটি করা হয়েছে। গত ১০ মাসে তিনজন বিচারপতির পদ শূন্য হলেও নতুন কোনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
২০০৯ সালে আপিল বিভাগে ১১ জন বিচারপতি দায়িত্বরত ছিলেন। বর্তমানে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয়জন বিচারপতি দায়িত্ব পালন করছেন। নতুন নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত আপিল বিভাগের বিচারাধীন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ও বেঞ্চ বাড়ানোর উদ্যোগ ব্যাহত হবে।
এদিকে আপিল বিভাগে ৬ জন বিচারপতি কর্মরত থাকলেও একজন অসুস্থতাজনিত কারণে দুই সপ্তাহের জন্য বিদেশে এবং আরেকজন ব্যক্তিগত কারণে ছুটিতে রয়েছেন।
এ অবস্থায় আজ রোববার (৫ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে।
তথ্যউপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ডিসেম্বরে আপিল বিভাগে বিচারক ছিলেন ৯ জন। এর পর তিনজন বিচারপতি অবসরে যান। তারা হলেন– বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি নুরুজ্জামান ও বিচারপতি (প্রধান বিচারপতি) হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
সংবিধানে আপিল বিভাগে বিচারপতির কোনো সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়নি। প্রধান বিচারপতির পরামর্শ ও প্রয়োজন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন সময়ে বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে সংবিধানের ৯৪ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ ও নিয়োগ করে থাকেন।
ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি যেরূপ সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজনবোধ করিবেন, সেইরূপ সংখ্যক অন্যান্য বিচারক লইয়া সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হইবে।’
সংবিধান অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত বিচারপতি পদে থাকা যায়।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত আপিল বিভাগে সাতজন বিচারপতি কর্মরত ছিলেন। সেদিন পর্যন্ত দুটি বেঞ্চে নিয়মিত বিচারকাজ পরিচালিত হতো। এর মধ্যে একটি বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন বিদায়ী প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং দ্বিতীয় বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতি (বর্তমান প্রধান বিচারপতি) ওবায়দুল হাসান।
এরপর উচ্চ আদালতে অবকাশ শুরু হয়। এরই মধ্যে গত ২৫ সেপ্টেম্বর অবসরে যান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। পরদিন শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
অবকাশ (ছুটি) শেষে গত ৮ অক্টোবর আপিল বিভাগে নিয়মিত বিচারকাজ শুরু হয়েছে। তবে এদিন থেকে আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চে বিচারকাজ চলছে। বিচারকের স্বল্পতাই এর প্রধান কারণ।
সুপ্রিম কোর্টের রীতি অনুযায়ী, হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চের মামলাগুলো আপিল বিভাগে আরও বেশিসংখ্যক বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে নিষ্পত্তি করা হয়। এ ছাড়া আপিল বিভাগে রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদনগুলো সমসংখ্যক বিচারপতিরা নিষ্পত্তি করে থাকেন। কখনও কখনও রায় বা আদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।
আবার হাইকোর্টে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলা তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চে নির্ধারিত হয়ে থাকে। এ পর্যায়ে আপিল বিভাগে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য দুটি বেঞ্চ গঠন করতে হলে অধিক সংখ্যক বিচারকের প্রয়োজন রয়েছে।
বিচারক স্বল্পতার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘আপিল বিভাগের একাধিক বেঞ্চ থাকা প্রয়োজন। প্রধান বিচারপতি মাত্রই দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি উদ্যোগ নিলে চলতি মাসেই বিচারক নিয়োগ হতে পারে।’
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগে বিচারকের সংখ্যা ১১ জন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু ইদানীং আমরা সমসংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ দিতে দেখছি না। গত বছরও আপিল বিভাগে ৯ জন বিচারপতি ছিলেন। প্রয়োজনীয় বিচারক নিয়োগ দেওয়া হলে দুটি নয়, তিনটি বেঞ্চও গঠন করা যায়। এটি হলে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমার পাশাপাশি মামলাজট অনেকাংশে কমবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি বিচারক নিয়োগ দেন। তাঁকে বিষয়টি জানানো হবে। আশা করছি, তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।’
সুপ্রিম কোর্টের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, আপিল বিভাগে ২১ হাজার ১৮৪টি মামলা বিচারাধীন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আপিল বিভাগে বিচারক পাঁচজন থাকলেও পরবর্তী সময়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসে বিচারপতি সাতজনে উন্নীত করে।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিল শুনানিতে কয়েকজন বিচারপতি বিব্রতবোধ করলে বিচারকাজ ব্যাহত হয়। ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার ও বিচারাধীন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আপিল বিভাগের বিচারপতি ১১ জনে উন্নীত করে আওয়ামী লীগ সরকার।