রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান শামীম (৬৬) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহির রাজিউন)। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে তার মেম্বার আইডি-৭১২৮।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, নিহত শামীমের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে। বৃহস্পতিবার আতাউর রহমান শামীম বেইলি রোডে অবস্থিত কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন।
রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে লাগা আগুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ৩৫ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত বহুতল ভবনে আগুন লাগে। এতে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বেইলি রোডের যে ভবনে আগুন লেগেছে, সেটি সাততলা। ভবনের দ্বিতীয় তলায় ‘কাচ্চি ভাই’ নামের খাবারের দোকান রয়েছে। তৃতীয় তলায় একটি পোশাকের দোকান ছাড়া ওপরের তলাগুলোতেও রয়েছে খাবারের দোকান। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে খাবারের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় হয়। অনেকেই পরিবার নিয়ে সেখানে খেতে যান।
তিনতলায় ছিল কাপড়ের দোকান। বাকি সব ছিল রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টগুলোতে ছিল গ্যাস সিলিন্ডার। যে কারণে আগুনের তীব্রতা ছড়িয়েছে ভয়াবহভাবে।
আতাউর রহমান শামীম রাজনৈতিক জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা দপ্তর সম্পাদক ও কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
এ ছাড়া তিনি ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) সংসদীয় আসনে মহাজোটের নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তবে পরাজিত হন। অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান শামীমের মর্মান্তিক মৃত্যুতে কুলাউড়াসহ জেলা জুড়ে শোকের ছায়া নেমেছে।
অ্যাডভোকেট শামীম ওই রাতে দুর্ঘটনার কিছু সময় আগে নুরুল আলম নামের আরেক সঙ্গীসহ একসঙ্গে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে কফি খেতে যান।
প্রাণে বেঁচে ফেরা নুরুল আলম জানান, ওই রেস্টুরেন্টে প্রবেশের ৫ মিনিটের মধ্যে রেস্টুরেন্টের নিচের দিকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পান। এ সময় কালো ধোঁয়ায় চারদিক ঢেকে গেলে তারা প্রথমে নিচে নামার চেষ্টা করেন। তবে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলিতে কিছু না দেখায় ফের উল্টো ঘুরে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে থাকেন।
এ সময় ভিড়ের মধ্যে আতাউর রহমান শামীমকে হারিয়ে ফেলেন নুরুল আলম। তিনি ওপরে উঠে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় ক্রেনে করে নিচে নেমে আসেন। কিন্তু আতাউর রহমান শামীম ভেতরেই কোথাও আটকা পড়েন। আগুন নেভানোর পর অ্যাডভোকেট শামীমের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
তার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হলে মরদেহ কুলাউড়ায় নিয়ে আসা হয়। এরপর কুলাউড়া নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রথম জানাজা এবং ব্রাহ্মণবাজারের শ্রীপুরে পারিবারিক কবরস্থান মাঠে ২য় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
নিহত আতাউর রহমান শামীমের পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি তার স্ত্রী ও একমাত্র কন্যা সন্তান নিয়ে দেশে আসেন। আগামীকাল রোববার পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার কথা ছিল।