ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হিন্দু আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে অভিযোগ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের

চিন্ময়ের ‘জামিন শুনানি ঠেকাতে’ ৭০ আইনজীবী আসামি: সনাতনী জোট

বাংলাদেশ সনাতনী সম্মিলিত জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী জামিন শুনানিতে অংশ নিতে না দেওয়া উদ্দেশ্যে ‘ষড়যন্ত্রমূলকভাবে’ ৭০ আইনজীবীকে মামলায় আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার জামিন আবেদনের শুনানির তারিখ পড়ার পর জোটের পক্ষ থেকে রোববার রাতে এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ করা হয়। জোটের অন্যতম সংগঠক স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী বিবৃতির বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

বিবৃতিতে সনাতনী জাগরণ জোটের নেতারা বলেন, “চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার জামিন শুনানিতে অংশ নেওয়া প্রায় ৭০ জন হিন্দু আইনজীবীর নামে মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার জামিন শুনানিতে অংশ নিতে না দেওয়ার জন্যই ‘ষড়যন্ত্রমূলকভাবে; হিন্দু আইনজীবীদের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।”

আরও পড়ুন: অ্যাড. আলিফ হত্যা: চিন্ময়ের কৌঁসুলিসহ আসামি অর্ধশতাধিক আইনজীবী

গত ২৬ নভেম্বর চিন্ময়ের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর পর আদালত চত্বরে প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পুলিশ ও কিছু লোকের।

সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার চার দিন পর আলিফের ভাই খানে আলম চট্টগ্রামের কোতয়ালী থানায় বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা করেন বলে জানানো হয়েছে সনাতনী জাগরণ জোটের বিবৃতিতে।

খানে আলম ভাঙচুর, বিস্ফোরণ ও জনসাধারণের উপর হামলার অভিযোগে যে মামলা করেছেন, তাতে ১১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঅ্যাড. আলিফ হত্যা: চিন্ময় কৃষ্ণকে আসামি করার দাবি আইনজীবীদের

আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন ৩১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলাও করেছেন।

জোটের নেতারা বলেন, “অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চিন্ময় ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানির দিন আদালতে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। চিন্ময় দাশের পক্ষে ওকালতনামা দেওয়া আইনজীবী অ্যাডভোকেট শুভাশীষ শর্মা ছাড়াও শুকলাল দাশ ও আয়ান শর্মা নামের দুজন সাংবাদিককেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।

“হিন্দু আইনজীবী ও দুই সাংবাদিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ের পক্ষে কাজ করেন বলেই তাদের মামলায় জড়ানো হয়েছে।”

চিন্ময়ের পক্ষে জামিন শুনানিতে অংশ নেওয়া একাধিক হিন্দু আইনজীবীর চেম্বারে ‘মৌলবাদীরা’ হামলা চালিয়েছে অভিযোগ এনে বিবৃতিতে বলা হয়, “একটি দলের অনুসারী কয়েকজন আইনজীবী চিন্ময় দাশের পক্ষে কেন জামিন শুনানি করা হয়েছে, এ অভিযোগ তুলে অ্যাডভোকেট রিগান আচার্যের ওপর আক্রমণ করেন।”

হামলায় রিগান আচার্য মাথায় মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং ঘটনার পর থেকে ‘মৌলবাদীরা’ হিন্দু আইনজীবীদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন বলেও অভিযোগ আনা হয় বিবৃতিতে।

এতে বলা হয়, “মৌলবাদীদের হুমকির কারণে চট্টগ্রামের হিন্দু আইনজীবীরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।”

আলিফ হত্যার ‘বর্ণনা’

আইনজীবী আলিফের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে, সে বিষয়েও বিবৃতিতে একটি ‘বর্ণনা’ দেওয়া হয়।

সনাতনী জোট নেতারা বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনার দিন জামায়াতের অনুসারী অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের নেতৃত্বে বিভিন্ন ‘উসকানিমূলক’ স্লোগান দিয়ে কয়েকশ লোক আদালত থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে হিন্দু অধ্যুষিত মেথর পট্টিতে হামলা চালায়।

“এ সময় দুইপক্ষের সংঘর্ষ শুরু হলে এক পর্যায়ে অ্যাডভোকেট সাইফুল হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলে ‘দুর্বৃত্তদের’ হাতে নিহত হন।”

এদিন আদালতে চিন্ময় দাশের পক্ষে আন্দোলনরত নিরীহ হিন্দু জনতাকে পুলিশ ও জামায়াত শিবির কর্মীরা নির্মমভাবে মারধর করে বলেও অভিযোগ করা হয় বিবৃতিতে। বলা হয়, “কিন্তু হিন্দুদের ওপর এ হামলার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি।”

ঘটনার পর থেকে ‘মৌলবাদীরা’ চট্টগ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে বলেও দাবি করেন জোটের নেতৃবৃন্দ।