জামিন শুনানিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর পক্ষে কোনো আইনজীবীকে দাঁড়াতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট।
আজ মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে এমন অভিযোগ তুলেছে সংগঠনটি। বিবৃতি দেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন জোটের অন্যতম সংগঠক স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাশ ব্রহ্মচারী।
জোটের নেতারা বিবৃতিতে বলেন, “ইতোমধ্যে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের পক্ষে যেসব আইনজীবী অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাদের মধ্যে ৭০ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে এবং অন্যদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, যা সম্পূর্ণভাবে আইনের শাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।”
বিবৃতিতে ‘তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ, চরম উদ্বেগ, ক্ষোভ ও হতাশা’ প্রকাশ করে এ বিষয়ে বাংলাদেশের সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা কামনা করেন জোটের নেতারা।
এতে বলা হয়, “৩ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) চট্টগ্রাম বিজ্ঞ মহানগর দায়রা জজ সাইফুল ইসলামের আদালতে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানি ছিল। কিন্তু চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর পক্ষে কোনো আইনজীবীকে আদালতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি।”
জোটের নেতারা বলেন, “একজন আসামির পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ আইনের বিধান। সেখানে সনাতনী সম্প্রদায়ের একজন ধর্মীয় গুরুর আইনজীবী নিয়োগ ও শুনানিতে বাধা দেওয়ার ঘটনা বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
“শুধু তাই নয়, শুনানির আগে আদালত চত্বরে মিছিল করে সনাতনী আইনজীবীদের অংশগ্রহণ না করার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং শুনানি করতে এলে তাদের ‘দেখে নেওয়ার’ প্রকাশ্য হুমকি দেওয়া হয়েছে।”
বিবৃতিতে জোট নেতারা বলেন, “কোনো অদৃশ্য নির্দেশে আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মামলা শুনানি ইচ্ছাকৃত বিলম্বিত করা হচ্ছে, যেন তিনি জেল থেকে বের হতে না পারেন।”
আরও পড়ুন: আইনজীবী আলিফের স্মরণে ৫ ডিসেম্বর দেশের সব বারে কালো পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত
সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিবৃতিতে বলা হয়, “অবিলম্বে আইনী মোকাবেলা করার সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে মুক্তি দিন। না হয় সারাদেশে সনাতনীরা রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। চিন্ময় প্রভুর মুক্তি এবং ৮ দফা বাস্তবায়নে সনাতনীরা পুনরায় মাঠে নামতে পিছপা হবে না।”
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে জামিন শুনানির নির্ধারিত দিন ছিল। কিন্তু চিন্ময় দাশের পক্ষে কোনো আইনজীবী এদিন শুনানিতে দাঁড়াননি। জামিন আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারক আগামী ২ জানুয়ারি আবার শুনানির দিন ধার্য করেন।
চিন্ময় দাশকে এদিন আদালতে হাজির করা হয়নি। শুনানির আগে সকালে আইনজীবী সমিতির নেতা ও সাধারণ আইনজীবীদের একাংশকে আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল করতে দেখা যায়।
এর আগে ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের এ মামলায় জামিন নাকচ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম কাজী শরীফুল ইসলাম।
ওই আদেশের পর আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন। আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে নিয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করে। এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়।
জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর সেদিনই চিন্ময় দাশের আইনজীবীরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন চেয়ে আবার জামিন আবেদন করেছিলেন। তবে সেদিন আর শুনানি হয়নি।
আলিফ হত্যার প্রতিবাদে বুধ ও বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম আদালতে বর্জন ও কর্ম বিরতি পালন করেন আইনজীবীরা। বৃহস্পতিবার ও রোববার প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ সংক্রান্ত মামলায় আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী না দাঁড়াতে আহ্বান জানানো হয় আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে।