আদালতে ডিজিটাল সাক্ষ্য: তত্ত্ব ও ব্যবহারবিধি (পর্ব-২)
মতিউর রহমান; জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট

আদালতে ডিজিটাল সাক্ষ্য: তত্ত্ব ও ব্যবহারবিধি (পর্ব-২)

মতিউর রহমান : প্রযুক্তির ব্যবহার সর্বত্র বৃদ্ধির সাথে সাথে মামলার বিচারকাজে ডিজিটাল সাক্ষ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়ছে। গত (পর্ব-১) তে ডিজিটাল সাক্ষ্য সংক্রান্ত সংশোধিত সাক্ষ্য আইনের প্রাসঙ্গিক বিধানগুলোর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। ডিজিটাল সাক্ষ্য অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হওয়ায় এর সত্যতা, অখণ্ডতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে আদালতে ডিজিটাল সাক্ষ্যের সঠিক উপস্থাপন ও ব্যবহার আবশ্যক।

বিচারিক অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংশোধিত সাক্ষ্য আইনে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ না করেই ডিজিটাল সাক্ষ্য কাগজে প্রিন্ট বা সিডি/পেন্ড্রাইভে কপি করে দাখিল করা হয়।ডিজিটাল রেকর্ডকে সাক্ষ্য হিসেবে আদালতে ব্যবহারের জন্য পদ্ধতিগত বিষয়ে কিছু নির্দেশনা ধারা ৬৫খ তে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সংশোধিত সাক্ষ্য আইনের ডিজিটাল সাক্ষ্য সংক্রান্ত বিধান ভারতীয় আইনের অনুরূপ। তাই, ডিজিটাল রেকর্ড সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার সংক্রান্ত আরোও কিছু নির্দেশিকা পাওয়া যায় বিভিন্ন মামলায় ভারতীয় উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত হতে।

ডিজিটাল রেকর্ড আদালতে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে উক্ত রেকর্ডের সত্যতা নিশ্চিতের জন্য আইনে উক্ত রেকর্ড উৎপাদন বা সংরক্ষণের সাথে জড়িত ডিভাইস বিষয়ে দায়িত্বশীল ও জ্ঞাত ব্যক্তির সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই বিষয়ে পর্ব-১ তে আমরা জেনেছি যে, ডিজিটাল রেকর্ডগুলো যদি কোনও মানব হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্ব-উৎপাদিত বা সরাসরি সিডি, ডিভিডি, হার্ড-ড্রাইভ, মেমরি চিপ এবং পেন ড্রাইভে রেকর্ড বা সংরক্ষণ হয় এবং সরাসরি সেগুলো মূল ডিভাইস সহ সাক্ষ্য হিসাবে উপস্থাপন করা হয়, সেটি প্রাথমিক প্রমাণ হিসাবে বিবেচিত হওয়ায় সার্টিফিকেট দাখিলের বাধ্যবাধকতা হতে অব্যহতি দেয়া যেতে পারে।একটি কম্পিউটার, ট্যাবলেট বা মোবাইল ফোনসহ মূল ডিজিটাল রেকর্ড উপস্থাপন করতঃ সেটির মালিক সাক্ষী হিসেবে আদালতে উপস্থিত হয়ে প্রমাণ করতে পারেন।

তবে, যদি এই ধরনের ডেটা অন্য স্টোরেজ মিডিয়াম যেমন সিডি, ডিভিডি, হার্ড-ড্রাইভ বা পেন ড্রাইভে কিছু পরিমাণে মানুষের হস্তক্ষেপে স্থানান্তরিত হয় বা কাগজে প্রিন্ট হয়, তবে এই ধরনের পরিস্থিতিতে এটি মাধ্যমিক সাক্ষ্য হিসাবে বিবেচিত হবে। সেক্ষেত্রে ধারা ৬৫খ(৪) অনুসারে সার্টিফিকেট সহ উক্ত আউটপুটটি সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। যেখানে ডিজিটাল রেকর্ড একটি কম্পিউটার সিস্টেম বা নেটওয়ার্কে থাকে এবং ফিজিক্যালি এই ধরনের সিস্টেম বা নেটওয়ার্ককে আদালতে আনা অসম্ভব বা অন্য কোন কারণে মূল ডিভাইস সহ মূল রেকর্ড আদালতে আনা অসম্ভব, তখন এই ধরনের ডিজিটাল  রেকর্ডে থাকা তথ্য প্রমাণের একমাত্র উপায় হল ধারা ৬৫খ(১) অনুসারে কোন স্টোরেজ মাধ্যমে কপি বা কাগজে প্রিন্ট করে দাখিল এবং একইসাথে এই ক্ষেত্রে ধারা ৬৫খ (৪) এর অধীনে সার্টিফিকেট দাখিল আবশ্যক।

আরও পড়ুনআদালতে ডিজিটাল সাক্ষ্য: তত্ত্ব ও ব্যবহারবিধি (পর্ব-১)

ডিভাইস প্রতিপক্ষের দখলে থাকতে পারে বা অন্য কোন যৌক্তিক কারণে সার্টিফিকেট সংগ্রহ অসম্ভব হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট ছাড়াও উপস্থাপিত মাধ্যমিক ডিজিটাল সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে মর্মে ভারতীয় উচ্চ আদালত একাধিক মামলায় সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। সার্টিফিকেটের বাধ্যবাধকতা শীথিলযোগ্য, তবে সার্টিফিকেট সংগ্রহের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট চাওয়া হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ এই ধরনের সার্টিফিকেট দিতে অস্বীকার করেন বা এই ধরনের দাবির জবাব দেন না, সেক্ষেত্রে উক্তপক্ষের আদালতে আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেটটি উপস্থাপন/সরবারাহ করার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্নটি উঠে তা হল, সার্টিফিকেট দেওয়ার ক্ষমতা কার আছে?ধারা ৬৫খ(৪)অনুসারেসংশ্লিষ্ট ডিভাইস বা সিস্টেমের মালিক বা ক্রিয়াকলাপ পরিচালনার বিষয়ে দায়িত্বশীল অফিসিয়াল পদে অধিষ্ঠিত একজন ব্যক্তির দ্বারা সার্টিফিকেটটিপ্রদান করা প্রয়োজন।ব্যক্তিগত চ্যাট রেকর্ড, ইমেইল এবং সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের স্ক্রিণশটগুলো প্রমাণ হিসাবে উত্থাপন করার ক্ষেত্রেউক্ত ব্যাক্তি নিজেই এটিরসার্টিফিকেট প্রদান করা উচিত।

আইনে “অফিসিয়াল পদ” শব্দটির অর্থ শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট অফিস বা সরকারী কর্তৃত্বে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিকে বোঝানো হয় নি, প্রাইভেট ব্যক্তিকেও বোঝানো হয়েছে। সার্টিফিকেটে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিকে  ডিজিটাল রেকর্ড সংশ্লিষ্ট ডিভাইসটির মালিকানা বা পরিচালনার সাথে ব্যক্তিগতভাবে জড়িতএবং উক্ত সিস্টেম পরিচালনার বিষয়েধারণা থাকতে হবে। যাইহোক, সার্টিফিকেট ইস্যুর জন্য একজন ব্যক্তির জ্ঞানের বিশেষ গভীরতার প্রয়োজন নেই, মূলত তিনি সার্টিফিকেটে ডিভাইস ও ডিজিটাল রেকর্ড বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য সরবরাহ করবেন।

সার্টিফিকেটের বিষয়বস্তু কিহবে সেটিও আইন দ্বারা নির্ধারিত।সার্টিফিকেটের বিবৃতিতে ডিজিটাল রেকর্ড শনাক্ত করণ অর্থাৎ, রেকর্ডের ধরণ, ডিভাইসের বিবরণ এবং এটি কিভাবে তৈরি করা হয়েছিল (অর্থাৎ সংরক্ষণ বা উৎস) তা বর্ণনা থাকতে হবে। ডিভাইস নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রেকর্ড উৎপাদন করেছে কি না বা ডিভাইসের কোন ত্রুটি রেকর্ডে প্রভাব ফেলেছে কি না ইত্যাদি বিবরণও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যিনি সার্টিফিকেট  (Certificate) প্রদান করবেন, তাকে অবশ্যই তার জ্ঞান এবং বিশ্বাস অনুযায়ী সঠিক তথ্য প্রদান করতে হবে এবং তার স্বাক্ষর থাকবে।

সার্টিফিকেট কে সংগ্রহ ও আদালতে উপস্থাপন করবে এই নিয়ে অনেক সময়ে বিতর্কের উদ্ভব হয়। যখন কোন ব্যক্তি বা পক্ষ তার নিয়ন্ত্রণাধীন কোন ডিজিটাল রেকর্ড সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করবেন, স্বাভাবিকভাবে তিনিই সার্টিফিকেট সংগ্রহ ও দাখিল করবেন। তদন্তকারী কর্তৃক সংগ্রকৃত ডিজিটাল রেকর্ডের সার্টিফিকেট তিনি সংগ্রহ করে রেকর্ডের সাথে দাখিল করবেন।

সার্টিফিকেট প্রস্তুত: ডিভাইস হতেডিজিটাল রেকর্ড সংগ্রহ করার সময়ে সার্টিফিকেটটি প্রস্তুত করা উচিত। ভারতে বেশ কয়েকটি মামলায় সমসাময়িককালে সার্টিফিকেট প্রস্তুত না হওয়ায় তা অগ্রাহ্য করা হয়। কিন্তু, অনেক সময় বাস্তব কিছু কারণেই এটা সম্ভব নাও হতে পারে। এই বিষয়েও ভারতীয়উচ্চ আদালতসহজ করে দিয়েছেন। যেখানে ডিজিটাল প্রমাণের উপস্থাপকনিশ্চিত যে তিনি যেই ডিজিটাল রেকর্ড নিয়ে কাজ করছেন সেটি সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করবেন, সেখানে তাকে অবশ্যই ডিজিটাল রেকর্ড উৎপাদন বা সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপনের নিমিত্ত সংগ্রহকালেই সার্টিফিকেট প্রস্তুতবা সংগ্রহ করতে হবে।

ডিজিটাল রেকর্ড সংগ্রহের সময় যদি উপস্থাপকসেটিসাক্ষ্য হিসাবে সম্ভাব্য ব্যবহার সম্পর্কে অবগত না থাকে, তাহলে সমসাময়িককালেসার্টিফিকেট  তৈরি করার দায় থেকে অব্যহতিপেতে পারে। এই ধরনের সার্টিফিকেটটি অবশ্যই ডিজিটাল রেকর্ডের সাথে থাকতে হবে যখন এটি প্রমাণ হিসাবে গ্রহণের বা প্রদর্শনী চিহ্নিতের নিমিত্ত উপস্থাপন করা হয়।

আপত্তি:ডিজিটাল রেকর্ড সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন বিষয়েবা সার্টিফিকেটের ত্রুটি বিষয়েআপত্তিথাকলেউক্ত ডিজিটাল রেকর্ড সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণের বা প্রদর্শনী চিহ্নিতের সময়েই উক্ত আপত্তি উত্থাপন করা উচিত।উচ্চ আদালতের ভাষায়, এই ধরনের আপত্তি যদি উপযুক্ত সময়ে নেওয়া হয় তাহলে পক্ষকে ত্রুটি নিরাময়ের জন্য সুযোগ দেয়া যায়, তাছাড়া পক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাযে, নথিটি প্রদর্শনী চিহ্নিত করার পর্যায়েত্রুটিটি নিরাময়করা যেতে পারে কিনা তা দেখতে হবে।

যেই ডিজিটাল রেকর্ড সহজাতভাবে সাক্ষ্য হিসেবে অগ্রহণযোগ্য সেটির বিষয়ে আপত্তিপরবর্তী যেকোন পর্যায়ে উপস্থাপন করা যেতে পারে, কারণ এটি একটি মৌলিক সমস্যা। প্রমাণের প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি একটি পদ্ধতিগত(procedural) বিষয় এবং এই বিষয়ে আপত্তি যদি বিচারের সময় নেওয়া না হয়, তাহলে আপিল পর্যায়ে আপত্তি উত্থাপনের অনুমতি দেওয়া ঠিক হবে না।

সাক্ষ্য প্রদান:সার্টিফিকেট প্রদানকারী ব্যক্তি ডিজিটাল রেকর্ডের উৎপত্তি ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিষয়ে সত্যতার নিশ্চয়তা প্রদান করে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিচারিক আদালতের সামনে ধারা ৬৫খএর অধীনে সার্টিফিকেট প্রদানকারী ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন নয়, যদি না আদালত প্রমাণ হিসেবেউপস্থাপিত ডিজিটাল  রেকর্ডের অখণ্ডতা সম্পর্কে সন্দেহ করে।

প্রদর্শনী চিহ্নিতকরণ:বিভিন্ন মামলায় উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুসারে ডিজিটাল রেকর্ড সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণকালেআদালতে তা চালানো/প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা আবশ্যক।ডিজিটাল সাক্ষ্য প্রদর্শনী চিহ্নিতকরণ নিয়ে অনেকেই দ্বিধান্বিত। আমরা ইতিপূর্বেই আলোচনায় জেনেছি যে, সাক্ষ্য আইনের “ডকুমেন্ট” সংজ্ঞার সংশোধন আনয়ন করে ডিজিটাল রেকর্ডকে ডকুমেন্ট সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই একটি ডিজিটাল রেকর্ড ডকুমেন্ট গণ্যে সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন হওয়ায় তা ডকুমেন্টের মতোই প্রদর্শনী চিহ্নিত করতে হবে। এটি দেওয়ানি মামলায় তেমন কোন অস্পষ্টতার সৃষ্টি করে না, কারণ দেওয়ানী মামলায় বস্তুগত সাক্ষ্য (Material Evidence) ধারণাটি অনুপস্থিত। ডিজিটাল রেকর্ড ডকুমেন্ট হিসেবে স্বীকৃতির পূর্বে বস্তুগত সাক্ষ্য হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আদালতে ব্যবহৃত হতো।

তাছাড়া, প্রকৃতিগত কারণে ডিজিটাল রেকর্ড বস্তুগত বিষয়ে সংরক্ষিত থাকে। তাই প্রদর্শনী চিহ্নিত করার সময় অনেকেই দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন। ডিজিটাল রেকর্ডকে স্বীকৃতি প্রদানকারি বা ডিজিটাল রেকর্ডের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই ধরণের বিভিন্ন মামলায় ডিজিটাল রেকর্ডের প্রদর্শনী চিহ্নিতকরণ বিষয় পর্যালোচনায় এই বিষয়ে কিছুটা ইংগিত পাওয়া যায়। পর্যালোচনায় দেখা যায় CDও DVR-কে বস্তুগত সাক্ষ্য হিসেবে প্রদর্শনী চিহ্নিত করা হয়েছে। আবার, CDR এর প্রিন্টকপি সাধারণ দালিলিক প্রমাণের মতো প্রদর্শনী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

ভারতীয় উচ্চ আদালত প্রদর্শনী চিহ্নিতকরণ বিষয়ে মন্তব্য করেন যে, যদিও আইন ডিজিটাল রেকর্ড সংবলিত বিষয়কে ডকুমেন্ট হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে, কিন্তু এই সংজ্ঞায়নের মাধ্যমে উক্ত বিষয়গুলো যে প্রকৃতিগত কারণে বস্তু সেই বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয় না। সুতরাং, সেগুলো বস্তুগত প্রমাণ হিসেবে প্রদর্শনী চিহ্নিত হলেও তা আইনের সংজ্ঞা অনুসারে ডকুমেন্ট হিসেবে বিবেচিত। ডিজিটাল রেকর্ড একটি অসার (intangible) বিষয় যা সাধারণত কোন বস্তুগত বিষয়ের আশ্রয়ে সংরক্ষিত হয়। তাই আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুসারে প্রতীয়মান হয় যে, ডিজিটাল রেকর্ড ফৌজদারি মামলায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রদর্শনী চিহ্নিত করার সময় উক্ত রেকর্ড কোন মাধ্যমে সংরক্ষিত তা বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।

ডিজিটাল রেকর্ড উল্লিখিত পদ্ধতিতে সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হলে উপস্থাপনকারীর প্রাথমিক দায়িত্ব পালন হয়ে যায় এবং তা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয়। উল্লিখিত পদ্ধতি অনুসরণে উপস্থাপিত ডিজিটাল সাক্ষ্যের সত্যতা, অখণ্ডতা ও নির্ভরযোগ্যতা বিষয়ে প্রতিপক্ষ আপত্তি উত্থাপন করলে এবং আদালতের নিকট পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় আপত্তির যৌক্তিকতা প্রতীয়মান হলে ধারা ৪৫ অনুসারে ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের মতামত গ্রহণ করতে পারেন।

ডিজিটাল সাক্ষ্য সংগ্রহ,মেটাডেটা, হ্যাশ ভ্যালু, ডিজিটাল ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশন বিষয়ে ধারণা ও ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের মতামত বিষয়ে লিখবো পরবর্তী পর্বে।

উল্লেখ্য যে, এই লেখায় ব্যবহৃত নজীরের রেফারেন্স, উদাহরণসহ ডিজিটাল সাক্ষ্য সংক্রান্ত আইনের ব্যাখ্যা, উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত, ডিজিটাল ফরেনসিক, বিভিন্ন প্রকার ডিজিটাল রেকর্ড সম্পর্কে ধারণা ও সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার পদ্ধতি বিষয়ে বিস্তারিত আমার লিখিত বই “আদালতে ডিজিটাল সাক্ষ্য:তত্ত্ব ও ব্যবহারবিধি” তে পাওয়া যাবে।

লেখক : মতিউর রহমান, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বাগেরহাট।