জয়নাল মাযহারী : আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০-এর প্রস্তাবনা (Preamble) অনুযায়ী, এই আইনের উদ্দেশ্য হলো—আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং বিচারপ্রাপ্তিতে অক্ষম নাগরিকদের Access to Justice নিশ্চিত করা। এটি একাধারে সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২ এবং ৩৮ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং Rule of Law ও Equality before Law-এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার একটি হাতিয়ার।
২০২৫ সালের সংশোধনীর মাধ্যমে এই আইনে প্রবর্তিত হয়েছে Pre-litigation Mediation, যেটি এখন নির্দিষ্ট কিছু মামলায় Obligatory Procedural Step হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগত পরিবর্ধনের বিপরীতে প্রিয়েম্বলে কোনো সংশোধন না আনার ফলে দেখা দিয়েছে Interpretative Inconsistency।
সুফল (Advantages)
১. Ensuring Legal Empowerment : আইনটি সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য State-Sponsored Legal Aid নিশ্চিত করে, যা Access to Legal Remedy-এর পথ সুগম করে।
২. Early Dispute Resolution : বাধ্যতামূলক প্রি-লিটিগেশন মিডিয়েশন আদালতের পূর্বেই বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ এনে দেয়, যার ফলে Litigation Backlog কমবে এবং Judicial Economy বজায় থাকবে।
৩. Cost-Efficient Justice Mechanism : সাধারণ মানুষ দীর্ঘ মামলা ও উচ্চ খরচের বেড়াজাল থেকে বের হয়ে Alternative Dispute Resolution (ADR) পদ্ধতির মাধ্যমে ন্যায়বিচার পেতে সক্ষম হচ্ছেন।
৪. New Professional Arena for Lawyers : আইনজীবীরা এখন শুধুমাত্র Litigator হিসেবে নয়, বরং Mediator, Legal Advisor, Paralegal Facilitator হিসেবেও আইনি সহায়তা কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারবেন।
সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ (Limitations and Challenges)
১. Preamble-Practice Mismatch : আইনের প্রিয়েম্বলে এখনো কেবল “অসচ্ছল ও অক্ষম” ব্যক্তিদের কথা বলা হয়েছে। অথচ সংশোধনী অনুযায়ী এখন এটি কার্যত Universal Application পাচ্ছে। এটি Legislative Ambiguity সৃষ্টি করে।
২. Inapplicability to Sensitive Cases : নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, গৃহহিংসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক মিডিয়েশন Re-traumatization ঘটাতে পারে এবং ভুক্তভোগীর Right to Safety and Privacy হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
৩. Lack of Qualified Mediators : দেশের অনেক জেলাতেই এখনো Certified Mediators নেই, ফলে প্রক্রিয়াটি অবিশ্বস্ত বা অকার্যকর হয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
৪. Reduced Scope for Junior Lawyers : সাধারণ মামলা হ্রাস পেলে New Entrants in the Bar অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে পারেন, যেহেতু মামলার মাধ্যমে তাদের প্রধান আয় আসে।
বিতর্ক (Points of Contention)
১. Voluntariness vs. Compulsion : মধ্যস্থতা একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রক্রিয়া হওয়া উচিত। বাধ্যতামূলক করে দিলে এটি Procedural Formality-তে পরিণত হয়ে কার্যকারিতা হারাতে পারে।
২. Preamble as Interpretative Aid : প্রিয়েম্বল আইনের অংশ না হলেও এটি Statutory Interpretation-এর সময় আদালতের জন্য Internal Aid হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলে, প্রিয়েম্বলের সীমিত ভাষা পুরো আইনের নতুন সম্প্রসারিত প্রয়োগ ব্যাখ্যায় বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।
সুপারিশ (Recommendations)
১. Amendment of Preamble : বর্তমান বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটিয়ে প্রিয়েম্বলে “সকল নাগরিকের ন্যায়বিচারে সমান অধিকার নিশ্চিতকরণ” এর মতো ভাষা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যা Substantive Equality ধারণাকে তুলে ধরবে।
২. Insertion of Exclusion Clauses : সংবেদনশীল ও সহিংসতা-সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোকে বাধ্যতামূলক মিডিয়েশন থেকে Expressly Exempt করা প্রয়োজন।
৩. Mandatory Training for Legal Aid Panel Lawyers : যাতে তারা ADR Ethics, Confidentiality Principles ও Client-Centered Mediation সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারেন।
৪. Monitoring Mechanism under Judicial Oversight : সেবা প্রদানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে District Legal Aid Offices-কে একটি Judicially Monitored MIS (Management Information System)-এর আওতায় আনতে হবে।
শেষ কথায় বলা যায়, এই আইনটি মূলত একটি Social Justice Instrument। তবে ২০২৫ সালের সংশোধনী এটিকে একটি Hybrid Justice Framework-এ রূপ দিয়েছে—যেখানে রাষ্ট্রীয় দায়, নাগরিক অধিকার ও প্রক্রিয়াগত বাধ্যবাধকতা মিলেমিশে রয়েছে। কিন্তু Legislative Text (Preamble) আর Operational Structure (Post-Amendment Provisions) এর মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতা এই আইনের Constitutional Clarity ও Judicial Coherence-এ অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য এখন প্রয়োজন Legislative Refinement—যা একদিকে আইনটির সাংবিধানিক ভিত্তি মজবুত করবে, অন্যদিকে জনগণের বিশ্বাস ও আইনজীবীদের ভূমিকার মাঝে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনবে।
লেখক : জয়নাল মাযহারী; আইনজীবী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও জজ কোর্ট কুমিল্লা এবং আইন বিষয়ে পিএইচডি গবেষক ও বিশ্লেষক।