টাঙ্গাইলের বিচারিক হাকিম (জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) আদালত ২০১৭ সালের সাক্ষ্য গ্রহণ ও মামলা নিষ্পত্তিতে রেকর্ড গড়েছেন। ২০১৭ সালে ওই আদালত রেকর্ড সংখ্যক ২০ হাজার ১৩০টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। একই সময়ে ১৭ হাজার ৩৬০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। এই আদালত গত বছর ২০১৬ সালেও রেকর্ড সংখ্যক ১৮ হাজার ৮৪৮টি মামলা নিষ্পত্তি করেছিলেন। সাক্ষ্য গ্রহণ করেছিলেন ১৪ হাজার ১৮৯ জন সাক্ষীর।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বিচারক স্বল্পতা, এজলাস সংকট ও জনবলের ঘাটতিসহ প্রয়োজনীয় অনেক সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতার পরও গত ১০ বছরের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে এবার। অথচ বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর বিগত ২০০৮ সালে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল ৫ হাজার ৫৩ টি। আর সাক্ষী গ্রহণ করা হয়েছিল ৬ হাজার ৯৪৬ জনের। বিগত ২০০৮ সালে মামলা দায়ের করা হয়েছিল ১৬ হাজার ১৬৭ টি। ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪১টি। ২০১০ সালে ৫ হাজার ৪৫০টি। ২০১১ সালে ৬ হাজার ৭৬৪টি। ২০১২ সালে ৫ হাজার ৪৭৩টি। ২০১৩ সালে ১৪ হাজার ৭২৪টি। ২০১৫ সালে ১২ হাজার ৮৪৩টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ২০১৬ সালে নিস্পত্তি করা হয়েছে ১৮ হাজার ৮৪৮টি মামলা। এছাড়াও ২০১৭ সালে পুর্বের ২৬ হাজার ৪০১টি ও ২০১৭ সালের দায়েরকৃত ১৬ হাজার ৮৮০টি মোট ৪৩ হাজার ২৮১টি মামলার মধ্যে ২০ হাজার ১৪৩টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কয়েকজন বিচারক জানান, তাদের আদালতে বিচারকের স্বল্পতা রয়েছে। তারপরও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম খালেদা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে তারা অতিরিক্ত সময় দিয়ে সাক্ষীগ্রহণসহ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। টাঙ্গাইলে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ছয়জন বিচারক বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষনে থাকায় বছরজুরে আদালতে বিচারক শুন্য ছিল। এতো প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও এই আদালত রেকর্ড সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। আদালত সমূহে মামলার কোন জট সৃষ্টি হয়নি।
সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এস আকবর খান বলেন, মামলা করে অনেক সময় বাদি ও বিবাদি আদালতে উপস্থিত হন না। এছাড়াও স্বাক্ষীরাও আদালতে স্বাক্ষ্য দিতে আসেন না। দীর্ঘদিন চলতে থাকায় এসব মামলা নিষ্পত্তি করতে হয়। তারপরেও টাঙ্গাইল আদালতে ম্যাজিস্টেটগণ অতিরিক্ত সময় দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করছেন। মামলা নিষ্পত্তি ক্ষেত্রে বিচারকদের আন্তরিকতার কোন অভাব নেই। তবে কিছু কিছু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডাক্তারদের সমন দেয়ার পরও স্বাক্ষ্য না দেয়ার কারণে মামলা নিষ্পত্তি করতে বিলম্ব হচ্ছে।
জেলা অ্যাডভোকেট বার সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন মিয়া বলেন, বিচারধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য আইন মন্ত্রনালয়ের তাগাদা রয়েছে। এছাড়াও মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিচারকবৃন্দ আন্তরিক রয়েছেন। বিশেষ করে ৫ ও ১০ বছরের অধিক সময়ের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের মূখ্য বিচারিক হাকিম (চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) বেগম খালেদা ইয়াসমিন বলেন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট পদায়িত থাকলে এবং অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা গেলে বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তি অনেক দ্রুত হবে এবং নিষ্পত্তির হারও অনেক বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও অধিক সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটগণের সুষ্ঠু আদালত ব্যবস্থাপনা, কর্মঘন্টার সঠিক ব্যবহার আইনের যথাযথ প্রয়োগ মূল ভূমিকা রেখেছে।