কক্সবাজারের সিভিল সার্জনসহ ৫ চিকিৎসককে আদালতে তলব
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, কক্সবাজার

কক্সবাজারে স্টাম্প জালিয়াতির দায়ে বাদীর বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : নন জুডিসিয়াল স্টাম্প জালিয়াতি করে ভুয়া জমি ক্রয় রশিদ সৃজন পূর্বক দেওয়ানী মামলা করার অভিযোগে এক প্রতারকের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলা দায়ের করেছে আদালত।

গত ২৮ আগস্ট কক্সবাজারের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম) ইরফানুল হক চৌধুরীর আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী আমির হোসাইন এ তথ্য জানিয়েছেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজী পাড়ার আবদুল হাকিমের পুত্র সাদ্দাম হোসেন একই এলাকার মৃত চাঁদ মিয়ার ৫ সন্তান কাছ থেকে ২০০৯ সালের ১০ অক্টোবর ১৭’২০ শতক জমি ক্রয় করেন মর্মে ৩ পৃষ্ঠার নন জুডিসিয়াল স্টাম্পে একটি নিবন্ধনহীন “জমি বিক্রয় রশিদপত্র” সৃজন করেন।

সৃজিত জমি বিক্রয় রশিদপত্র দিয়ে সাদ্দাম হোসেন বাদী হয়ে কক্সবাজার সদরের সিনিয়র সহকারী জজ মৈত্রী ভট্টাচার্যের আদালতে বিক্রয় রশিদমূলে উক্ত জমি দাবি করে প্রকৃত জমির মালিক একই এলাকার মৃত এজাহার মিয়া’র ওয়ারিশানের বিরুদ্ধে অ্যাডভোকেট তবারক হোসেনের মাধ্যমে একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন। মামলার নম্বর : অপর-২১০৬/২০২১ ইংরেজি। মামলায় মৃত এজাহার মিয়া’র ওয়ারিশানদের খতিয়ানটি বাতিল করে সাদ্দাম হোসেনের নামে খতিয়ান সৃজনের আবেদন জানানো হয়।

জাল স্টাম্পের প্রমাণ উদ্ঘাটন

বর্ণিত মামলার বিবাদীগণ অর্থাৎ মৃত এজাহার মিয়া’র ওয়ারিশানদের পক্ষে তাঁদের নিয়োজিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ নছির উদ্দীন কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ট্রেজারী শাখা থেকে সংবাদ নিয়ে জানতে পারেন, বাদী সাদ্দাম হোসেন যে ৩ পৃষ্ঠার নন জুডিসিয়াল স্টাম্পে জমি বিক্রয় রশিদপত্র সৃজন করে আদালতে দাখিল করেছেন, সেই নন জুডিসিয়াল স্টাম্পের ২ পৃষ্ঠা সরকারি ট্রেজারী থেকে কখনো সরবরাহ করা হয়নি।

তারমধ্যে, অপর ১টি স্টাম্প বিক্রয় রশিদ সম্পাদনের প্রায় ১০ বছর পর অর্থাৎ ২০২০ সালের ২০ আগস্ট ট্রেজারী থেকে সরবরাহ করা হলেও সেটি ভিন্ন ভেন্ডারের কাছে বিক্রয় করা হয়েছে। স্টাম্পের পেছনে ইস্যু করা ভেন্ডারের কাছে স্টাম্পটি ট্রেজারী থেকে বিক্রি করা হয়নি।

আদালতের পদক্ষেপ

বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন জানান, স্টাম্প জালিয়াতি করে প্রতারণার মাধ্যমে ভূয়া জমি বিক্রয় রশিদপত্র সৃজনের বিষয়টি ট্রেজারী অফিসার থেকে পাওয়া লিখিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার পর সাদ্দাম হোসেনের মামলাটি খারিজ (আর্জি প্রত্যাখ্যান) করার জন্য সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বাদীপক্ষে আবেদন জানান।

একইসাথে তিনি আদালতকে অবহিত করেন যে, অনুরূপ আরেকটি মামলা একই দাবি নিয়ে একই বাদী কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কাছে দায়ের করেছিলেন। কিন্তু কাগজপত্র জালিয়াতি করে প্রতারণাপূর্বক মামলাটি দায়ের করায় ঐ মামলাটি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খারিজ করে দেন।

এ অবস্থায় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক মৈত্রী ভট্টাচার্য মামলাটির কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জমি বিক্রয় রশিদপত্রটিকে বানোয়াট ও ভুয়া বলে সনাক্ত করেন। গত ২১ জুলাই আদালত সাদ্দাম হোসেনের দায়ের করা মামলাটি খারিজ করে দেন।

একইসাথে স্টাম্প জালিয়াতি করে ভূঁয়া ও ফেরবী জমি ক্রয় রশিদ সৃজন পূর্বক তা আদালতে দাখিলের মাধ্যমে দেওয়ানী মামলা করার অপরাধে আদালতের বেঞ্চ সহকারী শহীদুল ইসলামকে প্রতারক সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেন।

ফৌজদারী মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

এই নির্দেশের পর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী শহীদুল ইসলাম বাদী হয়ে প্রতারক সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে গত ২৮ আগস্ট কক্সবাজারের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম) ইরফানুল হক চৌধুরীর আদালতে সাদ্দাম হোসেনকে একমাত্র আসামী করে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার নম্বর : সিআর-১৪৩৬/২০২৫ ইংরেজি।

এসিজেএম আদালতের বেঞ্চ সহকারী আমির হোসাইন জানান, বিজ্ঞ বিচারক ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৬৭, ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারায় মামলাটি সরাসরি আমলে নিয়ে আসামী প্রতারক সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

আইনজীবী সমাজের প্রতিক্রিয়া

কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ছৈয়দ আলম বলেন, “জালিয়াতকারী ও প্রতারকের বিরুদ্ধে আদালতের উদ্যোগে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রশংসনীয়। এতে আদালত অঙ্গনে টাউট, বাটপার, প্রতারক ও জালিয়াতকারী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম কিছুটা হলেও কমবে। আদালতে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলার জট অনেকটা হ্রাস পাবে।”

দেওয়ানী আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট আখতার উদ্দিন হেলালী বলেন, “প্রতারকদের কারণে প্রকৃত বিচারপ্রার্থীরা বিভিন্ন ধরনের হয়রানী ও বিড়ম্বনার শিকার হয়ে থাকে। প্রতারক সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে আদালতের উদ্যোগে দায়ের করা মামলাটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। প্রতারকদের কাছে একটা বার্তা যাবে।”

তিনি আরও বলেন, “আইনজীবীদের মৌলিক কাজ হচ্ছে আদালতকে বিভ্রান্ত না করে সঠিক ও যথাযথ বিচারকার্য পরিচালনায় সহায়তা করা। এজন্য বিচারপ্রার্থীদের এনে দেওয়া কাগজপত্র আদালতে দাখিল করতে আইনজীবীদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।”