ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ — বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মোঃ মাহমুদুল হাসান আজ মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন, যেখানে তিনি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার লক্ষ্যে সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়নে একাধিক প্রতিরক্ষা অস্ত্র উৎপাদনকারী কোম্পানি প্রতিষ্ঠার এবং সেনা কল্যাণ সংস্থার আওতাভুক্ত সকল কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করে বে-সামরিক খাতে ছাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ জানিয়েছেন।
আবেদনপত্রে মাহমুদুল উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১(১) অনুযায়ী নাগরিকদায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে তিনি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রাষ্ট্রপতির কাছে এই আবেদন করলেন। তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬১ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মহামান্য রাষ্ট্রপতি।
আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ও ইসরাইল-ইরান যুদ্ধ, মায়ানমারে সরকারি বাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘর্ষ পর্যবেক্ষণ করে জনগণ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আন্তর্জাতিক যুদ্ধক্ষেত্রে দেখা গেছে সাম্প্রতিক যুদ্ধাধিকার মূলত মিসাইল, হাইপারসনিক মিসাইল, মিলিটারি ড্রোন, বিমান-ভিত্তিক হামলা, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ও মিলিটারি স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। এতে দেশের নিরাপত্তার জন্য কেবল বিদেশ থেকে অস্ত্র আমদানি করাই পর্যাপ্ত নয়—স্বদেশে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও অস্ত্র উৎপাদনের গুরুত্ব বেড়ে গেছে, উল্লেখ করেন আবেদনকারী।
আরও পড়ুন : পৃথক ফৌজদারি ও পারিবারিক আদালত প্রতিষ্ঠা হচ্ছে
মাহমুদুল তাঁর আবেদনপত্রে উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, ২০২৫ সালের ইসরাইল-ইরান সংঘাত ও অন্যান্য সাম্প্রতিক যুদ্ধের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে নিজের দেশের প্রযুক্তিতে তৈরি মিসাইল ও ড্রোন বহু ক্ষেত্রে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম। অন্যদিকে বিশাল পরিমাণ অর্থ খরচ করে অস্ত্র কেনার পরও কিছু দেশ নিরাশাজনক প্রতিরক্ষা তৈরি করতে সক্ষম হয়নি। ফলে তিনি বিবৃত করেন, দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য প্রতিরক্ষা শিল্পস্থানীয়ভাবে গড়ে তোলা অত্যাবশ্যক।
আবেদনপত্রে আরও তুলে ধরা হয়েছে, অতীতে বিভিন্ন সরকারের ভুল নীতি ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে প্রতিরক্ষা খাত দুর্বল থেকে গেছে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলো—যেমন পাকিস্তান ও ইরান—যতটুকু সামরিক সক্ষমতা অর্জন করেছে, আমরা তেমন সক্ষমতা অর্জন করতে পারিনি। একই সঙ্গে তিনি আক্ষেপ করে লিখেছেন যে বাংলাদেশে পৃথক প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পদ নেই, যা তিনি লজ্জাজনক হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং দাবি করেছেন যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় হওয়া উচিত এমন একজনের অধীনে যিনি সামরিক বিষয়ে অভিজ্ঞ ও যুদ্ধবিদ্যায় দক্ষ।
প্রস্তাবিত উদ্যোগসমূহের মধ্যে রয়েছে
-
সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে সরকারি ও বেসরকারি উভয় অর্থায়নে বিভিন্ন প্রতিরক্ষা অস্ত্র উৎপাদনকারী কোম্পানি স্থাপন করা; প্রয়োজনে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি গঠন করে জনসাধারণকে শেয়ার বাজারের মাধ্যমে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া।
-
দেশেই গোলাবারুদ, মিসাইল, হাইপারসনিক মিসাইল, মিলিটারি ড্রোন, যুদ্ধজাহাজ উৎপাদন ও মেইনটেনেন্সের ব্যবস্থা করা।
-
বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বে যুদ্ধবিমান ও এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম তৈরী ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যাবস্থা করা।
-
বাংলাদেশের জন্য আলাদা মিলিটারি স্যাটেলাইট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া।
-
এসব কোম্পানি সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে থাকবে এবং অবসরপ্রাপ্ত সামরিক সদস্যদের তাতে চাকরি প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে; প্রয়োজনে এসব অস্ত্র বিদেশেও রপ্তানি করা হবে, যা নতুন রপ্তানি খাত তৈরি করে অর্থনীতি শক্তিশালী করবে এবং বেকারত্ব কমাবে।
আবেদনকারীর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, গার্মেন্টস ও কৃষিজাত পণ্যের মতো স্থায়ী রপ্তানির বাইরে প্রতিরক্ষা শিল্পে ছোট পরিসরের প্রবৃদ্ধি থেকেই বৃহৎ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। তিনি দাবী করেন, সামরিক বাহিনীর মেধার অপচয় (brain drain) রোধ করা আবশ্যক। এজন্য সামরিক সদস্যদের মেডিকেল কলেজ, সিটি কর্পোরেশনসহ নন-সামরিক পদায়নে নিয়োজিত করা বন্ধ করতে হবে এবং সামরিক সদস্যদের কোনো রকম বে-সামরিক ব্যবসায়িক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া যাওয়া উচিত নয় — কেননা এটি তাদের মেধার অপচয়ে নির্জন করে।
আরও পড়ুন : ঋণখেলাপির পালানোর দরজা বন্ধ : হাইকোর্টের এক যুগান্তকারী রায়
আরও বলা হয়েছে, সেনা কল্যাণ সংস্থার আওতাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে বে-সামরিক খাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেড়েছেন আবেদনকারী। এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাইভেট লিমিটেড হিসেবে থাকলেও প্রকৃত বেনিফিশিয়ারি (de facto beneficiary) হচ্ছে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা; তবু সামরিক বাহিনীর প্রধান কাজ দেশের স্বাধীনতা রক্ষা, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা ও অস্ত্র উৎপাদন হওয়া উচিত — চাল, ডাল, তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যবসা সামরিক বাহিনীর কাজ নয়, বলে আর্থিক ও সংস্থানগত যুক্তি দিয়েছেন তিনি।
নিরাপত্তা দৃঢ় করার একটি প্রস্তাবনায় মাহমুদুল বলেন, দেশের মানুষের মধ্যে সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়ে আস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর এক বা একাধিকবার পার্বত্য চট্টগ্রাম বা অন্য কোনো উপযুক্ত স্থানে সামরিক যুদ্ধ মহড়ার (military war exercise) আয়োজন করে সেগুলো সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা উচিত।
সারসংক্ষেপে আবেদনপত্রে অনুরোধ করা হয়েছে — মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে সরকারি-বেসরকারি অর্থায়নে একাধিক প্রতিরক্ষা অস্ত্র উৎপাদনকারী কোম্পানি প্রতিষ্ঠা এবং সেনা কল্যাণ সংস্থার আওতাভুক্ত সকল কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করে বে-সামরিক খাতে ছাড়ানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাধ্যতামূলক কর্তব্য গ্রহণ করবেন।