মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : মানবপাচার প্রতিরোধে শুধু আইন প্রয়োগ যথেষ্ট নয়, সমাজের সর্বস্তরে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। নাহলে শতভাগ মানবপাচার প্রতিরোধ কখনো সম্ভব নয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলতা ও আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে মানবপাচার প্রতিরোধ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ (ভা.) মামুনুর রশিদ এসব কথা বলেন। সভাটি আয়োজন করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল উইমেন ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএনডাব্লিউএলএ) আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর সহায়তায়।
জেলা জজ মামুনুর রশিদ বলেন, মানবপাচারের মামলা কার্যকরভাবে নিষ্পত্তি করতে আইনি সেবাকে আরও জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার ঘাটতি চিহ্নিত করতে হবে। মানবপাচারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিচার বিভাগের পাশাপাশি আইনজীবী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সীমান্তরক্ষী, আইন সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা এবং কমিউনিটি পর্যায়ের সংগঠনগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনডাব্লিউএলএ’র চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সীমা জহুর। সঞ্চালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সিদ্দিক।
বিশেষ অতিথি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক ওসমান গণি বলেন, কক্সবাজারে মানবপাচার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিরোধে অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে।
আরও পড়ুন : ব্রাজিলে প্রধান বিচারপতি: বিচার বিভাগীয় সহযোগিতা, প্রযুক্তি বিনিময় ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা
ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সিদ্দিক বলেন, মানবপাচারের ভিকটিমদের ভয়-আতঙ্ক দূর করতে এবং সক্ষমতা বাড়াতে বেসরকারি সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। গণমাধ্যমকেও আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধে ফ্রন্টলাইন কর্মীদের প্রশিক্ষণ, অ্যাডভোকেসি মিটিং এবং নেটওয়ার্কিং বাড়াতে হবে।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ছৈয়দ আলম বলেন, মানবপাচার এখানে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এটি রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অনেকক্ষেত্রে মানুষ স্বেচ্ছায় মানবপাচারের শিকার হচ্ছে। তাই সামাজিক সচেতনতা কার্যক্রমকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।
সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার হামিমুন তানজিন, সিনিয়র সহকারী জজ বেলাল উদ্দিন, বিএনডাব্লিউএলএ’র কেস ম্যানেজমেন্ট কো-অর্ডিনেটর সেফায়েত বিন কামাল, প্রজেক্ট ম্যানেজার সৈয়দ মহসিনুল আবেদীন এবং আইওএম ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর সারা সাদিয়া ইসরাত।
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার, ট্রাইব্যুনাল-৩ এর পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইউনুস, অ্যাডভোকেট প্রতিভা দাশ, অ্যাডভোকেট সাকী এ কাউসার, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী, অ্যাডভোকেট তাওহীদুল এহেসান, অ্যাডভোকেট বিশ্বজিৎ ভৌমিক, সাংবাদিক জসিম উদ্দিন, কোর্ট ইন্সপেক্টর শাহ আলম প্রমুখ।
আলোচনায় মামলার তদন্তে প্রয়োজনে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ, সাক্ষী ও তদন্ত কর্মকর্তাদের সুরক্ষা, প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ, মিথ্যা মামলা প্রতিরোধে উদ্যোগসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উঠে আসে।
সভায় জানানো হয়, কক্সবাজারের তিনটি ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে মোট ৪৫২টি মানবপাচারের মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-১ এ ৯১টি, ট্রাইব্যুনাল-২ এ ২৯টি এবং ট্রাইব্যুনাল-৩ এ ৩৩২টি মামলা বিচারাধীন।