মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : মানবপাচারের মতো ভয়াবহ অপরাধ দমন এককভাবে সরকারের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। এটি অত্যন্ত কঠিন ও জটিল কাজ। তাই জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএইচসিআর, আইএলও, আইওএমসহ আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের বেসরকারি সংগঠন এবং স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া মানবপাচার প্রতিরোধ সম্ভব নয়।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারের একটি অভিজাত হোটেলে ইউএসডিওএস এর অর্থায়নে উইনরক ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত “মানবপাচার মামলায় বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে উপায়” শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সিদ্দিক এ মন্তব্য করেন।
সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার চেয়ারম্যান তারেক হায়দারের সভাপতিত্বে এবং অ্যাডভোকেট বিশ্বজিৎ ভৌমিকের সঞ্চালনায় আয়োজিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ছৈয়দ আলম ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার।
বিচারক সাইফুর রহমান বলেন, মামলার চাপ কমাতে এবং নির্ধারিত সময়ে বিচার সম্পন্ন করতে পুলিশ, রাষ্ট্রপক্ষ ও আইনজীবীদের মধ্যে সমন্বয় জরুরি।
আরও পড়ুন : নাম, টাকার অঙ্ক ও তারিখ ছাড়া ব্যাংক চেক আইনের চোখে বৈধ নয়
কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর পিপি অ্যাডভোকেট মীর মোশাররফ হোসাইন টিটু, ট্রাইব্যুনাল-৩ এর পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইউনুছ, অ্যাডভোকেট সাকী এ কাউসার, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী, এপিপি অ্যাডভোকেট আবু মুসা, পাচারের শিকার নুরুল আবছার, এনজিও ইপসা’র প্রজেক্ট ম্যানেজার হোসনে আরা রেখা প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে তারেক হায়দার বলেন, দেশে আইন থাকলেও বাস্তবে প্রয়োগের ঘাটতি রয়েছে। মানবপাচার দমন আইনে বিচারকদের যথেষ্ট ক্ষমতা দেওয়া আছে, প্রয়োজনে তা প্রয়োগ করতে হবে।
বিশেষ অতিথি ছৈয়দ আলম বলেন, মানবপাচারের মামলাগুলোর বিচার নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতিনিধি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সেল গঠন প্রয়োজন।
কর্মশালায় জানানো হয়, মানবপাচার মামলার দীর্ঘসূত্রীতার অন্যতম প্রধান কারণ হলো সাক্ষীর অনুপস্থিতি। এ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট বিশ্বজিৎ ভৌমিক বলেন, সাক্ষীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে উইনরক ইন্টারন্যাশনাল রাষ্ট্রকে নিয়মিত সহায়তা প্রদান করবে।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানানো হয়, ২০১২ সাল থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত কক্সবাজারে ৬১৬টি মানবপাচার মামলার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে আগস্ট পর্যন্ত মাত্র ৪৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজারের তিনটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৪৮২টি মানবপাচার মামলা বিচারাধীন।
কর্মশালায় আইনজীবী, সরকারি কৌঁসুলি, এনজিও প্রতিনিধি, ট্রাইব্যুনাল স্টাফ, গণমাধ্যমকর্মী এবং পাচার হয়ে ফিরে আসা ভিকটিমরা অংশ নেন।