আদালতবিমুখ আওয়ামী লীগ সমর্থিত শীর্ষ আইনজীবী নেতারা
আইনজীবী (প্রতীকী ছবি)

কুষ্টিয়ার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক আইনজীবীকে হেনস্তা: আইনজীবী সমাজের তীব্র নিন্দা

কুষ্টিয়ার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক এক আলোচনায় আইনজীবী জনাব মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রকাশ্যে হেনস্তা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনায় গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের সাধারণ আইনজীবী সমাজ। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে আইনজীবী মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং বর্তমান আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান আলোচনায় মাদকবিরোধী অবস্থান তুলে ধরে বলেন, “আমরা মাদকের বিপক্ষে, তবে এটি সিস্টেমেটিকভাবে প্রতিরোধ করতে হবে।” এসময় তিনি উল্লেখ করেন, সমাজে সাধু-সন্ন্যাসী যারা আছেন, তাঁদেরকে শান্তি ও ইসলামের পথে দাওয়াত দেওয়া যেতে পারে।

তবে তাঁর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অশালীন ও হুমকিমূলক ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানান। কথোপকথনে তিনি মোস্তাফিজুর রহমানের পেশাগত পরিচয় নিয়েও কটূক্তি করেন এবং বলেন, “আপনি জানেন না যে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে বসে আপনি গুরুতর বিষয়ে কথা বলছেন? আপনার এইটুকু সেন্সও নাই? আপনি কিসের অ্যাডভোকেটি করছেন?” পরে তিনি সরাসরি হুমকি দিয়ে বলেন, “এই ধরনের কথা খবরদার ভুলে উচ্চারণ করবেন না। করলে কঠিন একশন নেবো। তখন আমি ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের স্বরূপ দেব।”

আজ মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের সাধারণ আইনজীবী সমাজ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এ ধরনের বক্তব্য কেবল একজন আইনজীবীর ব্যক্তিগত মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেনি, বরং পুরো আইনজীবী সমাজের মর্যাদা ও স্বাধীনতার উপর আঘাত হেনেছে।

তাঁরা স্মরণ করিয়ে দেন যে—

  • সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা,

  • ২৭ অনুচ্ছেদে আইনের দৃষ্টিতে সমতা,

  • এবং ৩১ অনুচ্ছেদে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।

একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষে কোনো নাগরিককে, বিশেষ করে একজন আইনজীবীকে, ভয় দেখানো বা গণতান্ত্রিক আলোচনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা সরাসরি সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী।

আইনজীবী সমাজের দাবি

১. জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে অবিলম্বে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে।
২. জনাব মোস্তাফিজুর রহমান ও সমগ্র আইনজীবী সমাজের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
৩. ভবিষ্যতে আইনজীবীর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় এমন আচরণ থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার করতে হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যদি এসব দাবি যথাসময়ে পূরণ না হয়, তবে সংবিধান ও আইনের আলোকে আইনজীবী সমাজ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।

বাংলাদেশের সাধারণ আইনজীবী সমাজ স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, আইনের শাসন ও বার-এর মর্যাদা রক্ষায় তারা ঐক্যবদ্ধ এবং কোনো জনসেবক তাঁর সীমা অতিক্রম করলে তা বরদাশত করা হবে না।