গাইবান্ধার সাবেক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং বর্তমানে আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত কর্মকর্তা (অতিরিক্ত জেলা জজ) মো. আলমগীর কবির রাজকে বিভাগীয় শাস্তি হিসেবে “ভবিষ্যত পদোন্নতি বন্ধ” করা হয়েছে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা, ২০১৭ এর বিধি ২(চ) অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ০২/২০২১ নং বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়।
মামলার প্রক্রিয়ায় আলমগীর কবির রাজের বিরুদ্ধে “ভবিষ্যত পদোন্নতি বন্ধকরণ” শাস্তির প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্টে প্রেরণ করা হয়। পরে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট সরকারের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে।
ফলে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের পরামর্শ অনুযায়ী এবং বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা, ২০১৭ এর বিধি ১৬(খ)(২) অনুযায়ী তাঁকে “ভবিষ্যত পদোন্নতি বন্ধকরণ” দণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সচিব (চলতি দায়িত্ব) লিয়াকত আলী মোল্লা।
আরও পড়ুন : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রসিকিউটোরিয়াল উপদেষ্টা এহসানুল হক সমাজীর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ‘হ্যাকড’
এর আগে গাইবান্ধার সাবেক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. আলমগীর কবির রাজের ভবিষ্যৎ পদোন্নতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভা। বিচারক হিসেবে তাঁর অসদাচরণ প্রমাণিত হওয়ায় বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা, ২০১৭ অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত হয়। সভার সিদ্ধান্ত আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ফুলকোর্ট সভায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগের সূচনা হয় ২০১৮ সালের ৫ জুন। আলমগীর কবির রাজের বিরুদ্ধে অসদাচরণমূলক আচরণ সম্পর্কে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গাইবান্ধার তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশেদা সুলতানা সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। তাতে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৫ জুন গাইবান্ধার পুলিশ সুপারের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে তিনি জানতে পারেন যে এক নারী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। ওই নারী অতিরিক্ত জেলা জজ রাজের প্রথম স্ত্রী। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও গণমাধ্যমের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যান।
জেলা জজের চিঠিতে বলা হয়, ওই ঘটনায় গণমাধ্যমের পাশাপাশি সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপকভাবে সংবাদ প্রচারিত হয়। পরদিন রাজের প্রথম স্ত্রী জেলা জজের সঙ্গে দেখা করে জানান যে তাঁর স্বামী বাসার কাজের মেয়েকে বিনা অনুমতিতে বিয়ে করে গোপন রেখেছেন। তাঁর স্বামী তাঁকে এবং সন্তানদের নিয়মিত ভরণপোষণও দেন না। এতে বিচার বিভাগের সম্মান ও ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর রাজের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তির অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
জেলা জজের চিঠির পর বিচারক রাজের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়। তবে রাজের দেওয়া ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় পরে অভিযোগ অনুসন্ধানে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে গাইবান্ধার জেলা ও দায়রা জজ দিলীপ কুমার ভৌমিককে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করে মন্ত্রণালয়। অনুসন্ধানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। এরপর আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়।