লাইলাতুল ফেরদৌস: পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসনতান্ত্রিক অস্পষ্টতা, সামরিক তত্ত্বাবধান ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার জটিল বাস্তবতার ভেতর দিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছে ধর্ষণ ও দমন-পীড়নের ঘটনা। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি সদরে এক আদিবাসী কিশোরী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে তিন পার্বত্য জেলা থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পর্যন্ত। মামলার প্রাথমিক ধাপ থেকেই পুলিশের অনীহা, প্রভাবশালীদের চাপ, দুর্বল এজাহার তৈরি এবং ধর্ষণের আলামত নষ্ট করার মতো দীর্ঘদিনের অভিযোগ নতুন করে সামনে আসছে। আদিবাসী সংগঠনগুলোর দাবি, এসব ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে চাপিয়ে দেওয়া দমননীতিরই অংশ, যেখানে বিচার ও নিরাপত্তার আশ্বাস বারবার মুখ থুবড়ে পড়ছে।
পটভূমি
পার্বত্য চট্টগ্রাম (CHT) বাংলাদেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং নিরাপত্তা প্রেক্ষাপটে দীর্ঘস্থায়ী একটি অস্থিতিশীল অঞ্চল হিসেবে পরিচিত কেননা স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো সরকারের আমলেই এ অঞ্চলের অস্থিরতা পুরোপুরি দূর হয়নি। এই অস্থিরতাকে কেবল আইন-শৃঙ্খলা কেন্দ্রিক সমস্যা হিসেবে দেখা যাবে না, কারণ এর পেছনে রয়েছে জটিল ও খানিকটা পরিকল্পিত কাঠামোগত সংকট যেমন- ভূমি অধিকার নিয়ে বিরোধ, জাতিসত্তার স্বীকৃতির দাবি এবং স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নের মতন ইস্যু। ক্ষমতার ভারসাম্যতা এখানে অকার্যকর। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, সামরিক শাসন কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার কেউ বাদ যায় নি, যেখানে প্রত্যেকে বিভিন্ন সময় এই সংকট মোকাবিলায় প্রশাসনিক ও সামরিক সমাধানের পথে হেঁটেছে। কিন্তু মূল সমস্যার শিকড়ে হাত না দেওয়ায় অস্থিতিশীলতা এক প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান সংকটের উৎপত্তি ঔপনিবেশিক আমল থেকে যখন ব্রিটিশ সরকার ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন এবং ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে অঞ্চলটিকে “Totally Excluded Area” হিসেবে ঘোষণা করে। যার ফলে এ অঞ্চলের আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকার ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য সুরক্ষিত থাকে। কিন্তু ১৯৪৫ সালের পর থেকে এই বিশেষ মর্যাদা দুর্বল হতে থাকে কারণ পাকিস্তান আমলে এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে এই বিশেষ সুরক্ষার বিলোপ ঘটে, যা ভূমি দখল ও বসতিস্থাপনের পথ উন্মোচন করে দেয়।
কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করার মতন ঘটনা ছিল আগুনে ঘি ঢালার ন্যায় কারণ ১৯৫৭-৬০ সালে নির্মিত এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রায় ১ লাখ আদিবাসী বাস্তুচ্যুত হয় এবং প্রায় ৪০% আবাদি জমি পানির নিচে ডুবে যায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে, নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ পর্যাপ্ত ছিল না এবং অনেক পরিবার পুনর্বাসিত হতে পারেনি। এই অভিজ্ঞতা পাহাড়ি জনগণের মনে রাষ্ট্রের প্রতি গভীর ক্ষোভ ও অবিশ্বাসের জন্ম দেয় আর এজন্যেই কাপ্তাই বাঁধের ঘটনাকে অনেকেই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রথম বড় আঘাত হিসেবে বিবেচনা করে, যা পরবর্তীতে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে রাজনৈতিক আন্দোলন এবং সশস্ত্র সংগ্রামের জন্ম দেয়।
আরও পড়ুন : ডিজিটাল সাক্ষ্য–সংক্রান্ত শেষ পর্ব: ভার্চুয়াল শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণের প্রক্রিয়া
এরপর আসে আরেকটি ইস্যু, আর তা হলো ১৯৭৯ সালের বাঙালি বসতি স্থাপন কর্মসূচি, যা জনসংখ্যাগত ভারসাম্য পুরোপুরি পরিবর্তন করে দেয় কেননা ১৯৭৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের সংখ্যা ছিল মাত্র ১১.৬%, কিন্তু ১৯৯১ সালে তা প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যায় পরিণত হয়। ফলে ভূমি দখল, আদিবাসীদের উচ্ছেদ এবং আন্তঃসাম্প্রদায়িক সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করে এবং বহু পাহাড়ি পরিবার শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। এভাবে কাপ্তাই বাঁধ, বসতি স্থাপন কর্মসূচি এবং আইনগত সুরক্ষা অপসারণ মিলে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতার ভিত্তি তৈরি হয়। যা আজও নিরসন করা যায়নি।
আমরা জানি যে, বাংলাদেশ সংবিধান পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেশের অন্যান্য জেলার মতোই একটি অভিন্ন অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং সংবিধানের কোথাও পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য আলাদা সংবিধানিক স্বায়ত্তশাসন নেই। তবে বাস্তবে, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তি অনুসারে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হয়েছিল, যেখানে কিছু প্রশাসনিক ও উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থানীয় প্রতিনিধিদের সীমিত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবুও নিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনী ও কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্ব বহাল রয়েছে, এর ফলে একটি দ্বৈত শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। যা অনেকাংশে সংবিধানের একক সার্বভৌমত্ব নীতির সঙ্গে অসঙ্গতি সৃষ্টি করে।
দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতার পেছনে কয়েকটি কারণ পরিলক্ষিত –
চুক্তি বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব
১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি দীর্ঘ দুই দশকের সশস্ত্র সংঘাতের অবসান ঘটালেও চুক্তির মৌলিক ধারা আজও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হয়নি কারণ প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ধারা এখনো অবাস্তবায়িত। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, সামরিক সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন, সবাই ক্ষমতায় আসার আগে বা এসে প্রতিশ্রুতি দিলেও চুক্তির মূল ধারাগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়নি। সরকার প্রায়শই আংশিক বাস্তবায়নের দাবি করলেও, পাহাড়ি সংগঠনগুলো এটিকে “প্রহসন” বলে অভিহিত করে। এই পারস্পরিক অবিশ্বাস আন্তঃসাম্প্রদায়িক আরো উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে।
চুক্তির আওতায় গঠিত বিশেষ শাসন কাঠামো, যেমন – পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আঞ্চলিক পরিষদ এবং তিনটি জেলা পরিষদের মতন বিষয় খাতা কলমে থাকলেও বাস্তবে কার্যকর নয়। সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হিসেবে ধরা হয় সাধারণ প্রশাসন, পুলিশ, ভূমি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি খাতের ক্ষমতা হস্তান্তর না হওয়া। ফলে বেসামরিক শাসন ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছে এবং আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ স্থিতাবস্থা বজায় রেখেছে।
ভূমি বিরোধ ও কমিশনের অচলাবস্থা
ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি পার্বত্য চুক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে আছে এবং এ লক্ষ্যে ২০০১ সালে ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন করা হয়, যা ২০১৬ সালে সংশোধিত হয়। কমিশনকে অবৈধ দখল বাতিল ও বৈধ মালিকদের দখল ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয় ঠিকই কিন্তু সেটেলারদের বিরোধিতা, আইনি জটিলতা এবং প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে কমিশন কার্যত নিষ্ক্রিয়। এর ফলে পাহাড়ে ভূমি দখল, হোটেল নির্মাণ ও আদিবাসীদের উচ্ছেদ অব্যাহত রয়েছে, যা স্থানীয় সমাজে আরও ক্ষোভ তৈরি করছে।
বর্তমান নিরাপত্তা ও শাসনতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জ
আজকের পার্বত্য চট্টগ্রামের সংকট বহুমাত্রিক রূপ লাভ করেছে। কয়েকদিন পরপরই স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে সামরিক বাহিনীর দ্বন্দ্ব সংঘাত তারই বহিঃপ্রকাশ।
প্রথমত, ‘অপারেশন উত্তরণ’ নামক সামরিক তত্ত্বাবধান এখনো চলমান যেখানে চুক্তিতে সামরিক ক্যাম্প প্রত্যাহারের কথা থাকলেও তা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বেসামরিক প্রশাসনকে কার্যত নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে, যা পাহাড়ি জনগণের ঐতিহাসিক অবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
দ্বিতীয়ত, আঞ্চলিক সশস্ত্র দলগুলো ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। শান্তি বাহিনীর অস্ত্র সমর্পণের পর জেএসএস, ইউপিডিএফ, কেএনএফসহ একাধিক দল গড়ে ওঠে এবং তাদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এই সংঘর্ষ এখন মূলত চাঁদাবাজি ও অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে, যার ফলে সাধারণ মানুষের জীবন আরও অনিরাপদ হয়েছে।
তৃতীয়ত, শাসনতান্ত্রিক অস্পষ্টতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। একদিকে বিশেষ শাসন কাঠামো, অন্যদিকে সামরিক তত্ত্বাবধান, দুটি সমান্তরাল কর্তৃত্বব্যবস্থা বিরোধ তৈরি করছে। এর ফলে আইন-শৃঙ্খলা, প্রশাসন ও উন্নয়ন কার্যক্রম সঠিকভাবে এগোতে পারছে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি করতে পারে –
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে অগাধ সুযোগ রয়েছে এবং তারা চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তির পথ সুগম করতে পারে। এর জন্য কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য।
প্রথমত, চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে এবং একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে। আন্তঃদলীয় ও আন্তঃসাম্প্রদায়িক সংলাপ শুরু করে পাহাড়ের বাঙালি ও আদিবাসী উভয় পক্ষের আস্থা পুনঃস্থাপন জরুরি।
দ্বিতীয়ত, চুক্তি অনুযায়ী ‘অপারেশন উত্তরণ’ প্রত্যাহার করতে হবে নতুবা নতুন চুক্তি গঠন করতে হবে। সামরিক ক্যাম্প সরিয়ে বেসামরিকীকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব বেসামরিক পুলিশ প্রশাসনের হাতে হস্তান্তর করতে হবে এবং শতভাগ দায়িত্বশীলতা ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হতে হবে।
তৃতীয়ত, আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদকে ক্ষমতা হস্তান্তর করে কার্যকর করতে হবে। তাদের নিজস্ব কার্যালয়, বাজেট এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিতে হবে। আমলাতান্ত্রিক বাধা দূর করতে দ্রুত নির্বাহী আদেশ প্রয়োজন।
চতুর্থত, ভূমি কমিশনকে সক্রিয় করতে হবে এবং প্রচলিত আইন ও প্রথা অনুযায়ী সার্কেল চীফদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে ভূমি বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। পাশাপাশি, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে বৈধ মালিকদের দখল ফিরিয়ে দিতে হবে।
পঞ্চমত, সেটেলারদের সম্মানজনক পুনর্বাসনের জন্য একটি জাতীয় নীতি প্রণয়ন করতে হবে। একই সাথে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তাদের সাংস্কৃতিক ও ভূমি অধিকার সুরক্ষিত থাকে।
শেষত, আঞ্চলিক সশস্ত্র দলগুলোর সাথে বিশ্বাসযোগ্য মধ্যস্থতায় আলোচনা শুরু করতে হবে, যাতে তারা চাঁদাবাজির অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে এসে মূল ধারায় ফিরে আসে।
নতুন বাংলার সংবিধানে পাহাড়িদের অধিকার কেমন হবে –
নতুন বাংলার সংবিধানে পাহাড়িদের অধিকার স্পষ্ট ও সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত করতে হবে।
প্রথমত, তাদের নিজস্ব পরিচয়, ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতিযোগ্য কি না এবং “আদিবাসী” হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি সংরক্ষণ করা হবে কি নাহ্ সে বিষয়ে স্পষ্ট অনুচ্ছেদ থাকা।
দ্বিতীয়ত, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে স্থানীয় পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদকে প্রশাসন ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা দিতে হবে।
তৃতীয়ত, পাহাড়িদের ঐতিহ্যগত ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকারকে সংবিধানিক সুরক্ষা দিতে হবে, যাতে কোনো ভূমি অধিগ্রহণ বা সম্পদ ব্যবহার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সম্মতি ছাড়া সম্ভব না হয়।
চতুর্থত, বিচার ও আইন–শৃঙ্খলা রক্ষায় পাহাড়িদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা অব্যাহত থাকা।
সর্বোপরি, রাজনৈতিক বা সামরিক, একক কোন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সদিচ্ছা বা অনিচ্ছার উপর ভিত্তি করে নিয়মাবলী তৈরি বন্ধ করতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি ও স্থানীয় অধিবাসীদের মঙ্গলের জন্যে কাজ করে যেতে হবে।
স্বাধীনতার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থিতিশীলতা মূলত রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, কাঠামোগত দুর্বলতা এবং চুক্তি বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতার কারণে জিইয়ে আছে। সামরিক তত্ত্বাবধান বজায় রাখা এবং ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণে বিলম্ব করা সমস্যাকে আরও জটিল করেছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যদি আন্তরিকতা ও দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে পদক্ষেপ নেয় এবং নতুন বাংলায় নতুন সংবিধান যদি স্পষ্টতা বজায় রাখে, তবে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি মজবুত করে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
অন্যথায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে নতুন করে দ্রোহের জন্ম নেবে, যা দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সময়োপযোগী, স্বচ্ছ এবং কার্যকর বাস্তবায়নই পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার একমাত্র পথ।
লেখক: লিগ্যাল কনসালটেন্ট এবং শিক্ষানবিশ আইনজীবী, জজ কোর্ট, ঢাকা।
রেফারেন্স –
১) সরকারি ওয়েবসাইট ও আইনগত উৎস
1. Laws of Bangladesh, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন, ১৯৯৮ (Government of Bangladesh) https://bdlaws.minlaw.gov.bd/.
2. Ministry of Land, ২০০১ সনের ৫৩ নং আইন: পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১ https://minland.portal.gov.bd/.
3. Laws of Bangladesh, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১ (ধারা ৬) https://bdlaws.minlaw.gov.bd/.
4. DPP (Bangladesh), ২০১৬ সনের ৪৫ নং আইন: পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০১৬ https://dpp.gov.bd/.
২) গুরুত্বপূর্ণ রিসার্চ ও তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট
1. Jumjournal, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বিরোধ প্রসঙ্গে’ (Jumjournal) https://www.jumjournal.com/.
2. Roar Media, ‘কাপ্তাই বাঁধ এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্প: আদিবাসীদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার ইতিহাস’ (Roar Media) https://archive.roar.media/.
3. Banglapedia, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, ১৯৯৭’ (Banglapedia) https://bn.banglapedia.org/.
4. Jumjournal, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের বসতি স্থাপন’ (Jumjournal) https://www.jumjournal.com/.
5. Kapaeeng Foundation, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সমস্যা ও আশু করণীয়’ (Kapaeeng Foundation) https://www.kapaeeng.org/.