আইনজীবী রাকেশ কিশোর
আইনজীবী রাকেশ কিশোর

সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির দিকে জুতা নিক্ষেপ: ‘পরমাত্মা বলেছেন, তাই করেছি’ — অভিযুক্ত আইনজীবী রাকেশ কিশোরের দাবি

সুপ্রিম কোর্টে ভারতের প্রধান বিচারপতি বি. আর. গাভাইয়ের দিকে জুতা নিক্ষেপের একদিন পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বরখাস্তকৃত আইনজীবী রাকেশ কিশোর দাবি করেছেন, “পরমাত্মা আমাকে বলেছেন, তাই করেছি।”

সোমবার সকালে আদালত কক্ষে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার পর মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দিল্লির মায়ুর বিহারের রিভারভিউ অ্যাপার্টমেন্টে তার বাসার সামনে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবাদকারীরা হাতে জুতার মালা, ড. বি. আর. আম্বেদকরের ছবি ও ভারতের সংবিধানের কপি নিয়ে অবস্থান নেয়। তারা স্লোগান দেয়— “সিজেআই’র অপমান সহ্য করবে না হিন্দুস্তান।” এসময় এলাকাজুড়ে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং নিরাপত্তার জন্য ব্যারিকেড বসানো হয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ জানান, রাকেশ কিশোরের বিরুদ্ধে আগেও “সহিংস আচরণের” অভিযোগে একাধিকবার থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল।

রাকেশ কিশোর দাবি করেছেন, তিনি শাহদারা কোর্ট ও দিল্লি হাইকোর্টে দীর্ঘদিন ধরে আইনচর্চা করছেন। তিনি বলেন, “আমি পরমাত্মার কাজ করেছি। এটা ছিল ঈশ্বরপ্রদত্ত দায়িত্ব। খাজুরাহোর এক মন্দিরে বিষ্ণু মূর্তি পুনর্নির্মাণের আবেদন খারিজের সময় প্রধান বিচারপতির মন্তব্য আমাকে গভীরভাবে আঘাত করেছে… তাই আমি পদক্ষেপ নিয়েছি।”

আরও পড়ুন : ভারতের প্রধান বিচারপতির দিকে জুতা ছুড়ে মারলেন আইনজীবী

তিনি আরও বলেন, “পরমাত্মা যদি আবার বলেন, আমি আবারও করব।” সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি ঘটনার জন্য কোনো অনুশোচনা প্রকাশ করেননি এবং বলেন যে, “ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই কাজ করেছি।”

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, কিশোরের পরিবার নিরাপত্তারক্ষীদের নির্দেশ দিয়েছে যেন কাউকে বাসায় প্রবেশ করতে না দেওয়া হয়। তারা জানায়, রাকেশ কিশোর “মানসিকভাবে ভালো নেই” এবং “অসুস্থ অনুভব করছেন।”

অভিযুক্তের অতীত আচরণ নিয়েও নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। স্থানীয় ৭০ বছর বয়সী পুরুষোত্তম বলেন, “এটা তার প্রথম ঘটনা নয়। ২০২১ সালে আমরা তার সহিংস আচরণের বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছিলাম।” পুলিশে জমা দেওয়া ওই অভিযোগে বলা হয়, কিশোর নিয়মিতভাবে বাসিন্দাদের ভয় দেখাতেন, এক সিনিয়র নাগরিকের ওপর শারীরিক হামলাও চালান এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ধর্মীয় ও জাতিগত গালি দিতেন।

অন্য এক বাসিন্দা কৌশল বলেন, “তিনি একসময় সোসাইটির কল্যাণ সমিতির সদস্য ছিলেন। আমি খুব ভালোভাবে চিনি না, কিন্তু তার আচরণ নিয়ে অনেক কিছু শুনেছি। তবুও সুপ্রিম কোর্টে এমন ঘটনা ঘটানো সত্যিই অবাক করার মতো।”

এ ঘটনার প্রতিবাদে ‘আপ’ নেতা ও সাবেক এমএলএ সওরভ ভরদ্বাজ ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেন, “এটা শুধু জুতা ছোড়ার ঘটনা নয়, এটা সংবিধানের ওপর আক্রমণ। প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে অনলাইনে যেভাবে জাতিগত ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য হচ্ছে, সরকারকে অবশ্যই সেগুলো অপসারণ করতে হবে।”

প্রতিবাদকারীরা দাবি করেন, পুলিশ যেন অবিলম্বে ঘটনার তদন্ত শুরু করে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, তা সে অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে দাখিল হোক বা না হোক।