ঢাকার আদালতের হাজতখানায় অবশেষে শেষ হলো দীর্ঘদিনের এক অনিয়ম—এখন থেকে কারাগার থেকে হাজিরা দিতে আসা আসামিদের দুপুরের খাবার দেওয়া হচ্ছে। এই উদ্যোগে একদিকে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে, অন্যদিকে দুর্নীতির পথও রুদ্ধ হয়েছে।
ঢাকা আদালতের হাজতখানায় আগে দুপুরের খাবারের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ফলে হাজিরা দিতে আসা বন্দিরা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অনাহারে থাকতেন। এই পরিস্থিতিকে ঘিরে কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য টাকার বিনিময়ে বন্দিদের জন্য বাইরে থেকে খাবার সরবরাহ করতেন।
এই অনিয়মের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ঘুস ওপেন সিক্রেট’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি আলোচনায় আসে।
পরবর্তীতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত দুর্নীতি তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে।
সেই ধারাবাহিকতায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের নির্দেশে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমান কঠোর পদক্ষেপ নেন।
এর ফলেই চলতি মাস থেকে বন্দিদের জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা চালু হয়। এখন প্রতিদিন কারাগার থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় বন্দিদের জন্য পাঠানো হয় একটি ডিম, একটি বড় পাওরুটি, একটি কলা ও দুটি খেজুর।
এছাড়া নতুনভাবে গ্রেফতার হওয়া (প্রোডাকশনে আসা) আসামিদের জন্য দেওয়া হয় একটি কলা, দুটি রুটি, একটি কেক ও পানি।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির আবুল হাসান কানন বলেন, “কয়েক দিন আগে বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী আদালত পর্যবেক্ষণে এসে সমস্যা দেখে গেছেন। এখন কেউ খাবার দেওয়ার বিনিময়ে অবৈধ লেনদেন করতে পারবে না।”
হাজতখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই জাহিদুল ইসলাম জানান, “কারাগার থেকে পাঠানো খাবার আমরা বিশেষ ব্যবস্থায় বন্দিদের হাতে তুলে দিই।”
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম বলেন, “এই সিদ্ধান্ত শুধু মানবিক নয়, আদালতের ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার দৃষ্টান্ত।”
ডিএমপির অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের ডিসি তারেক জুবায়ের বলেন, “আগে বন্দিরা খাবার পথে খেয়ে ফেলত। এখন দুপুর ১২টার দিকে আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটদের উপস্থিতিতেই বিতরণ করা হয়।”
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-মামুনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।