উচ্চ আদালতের সংস্কার করা না হলে বিচারপ্রার্থীরা সুফল পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন আইন বিচার ও সংসদ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, উচ্চ আদালতে এখনো অনেক সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি মনে করেন, বেঞ্চ গঠনের কাজকে বিকেন্দ্রীকরণ না করলে বিচার ব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত গতি আসবে না।
আজ বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে ই-বেইলবন্ড কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, “উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনার প্রক্রিয়া নিয়ে মানুষের অনেক প্রশ্ন আছে। অনেক সময় পুরনো মামলা পিছিয়ে যায়, আবার পরের মামলা আগে আসে—এমন বৈষম্য বিচারপ্রত্যাশীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে বিচার ব্যবস্থায় সময় বাঁচানোর জন্য নানা পরিবর্তন এনেছি। সরকারি কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটদের সাক্ষ্য এখন অনলাইনে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর লক্ষ্য—বিচারপ্রার্থী মানুষ যেন কম ভোগান্তিতে ন্যায়বিচার পায়।”
ছোটখাটো পারিবারিক বা অর্থনৈতিক বিরোধে যেন মানুষকে আদালতে না আসতে হয়, সে দিকেও সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি। “দুই লাখ টাকার চেকের মামলা কিংবা শিশুর কাস্টডি নিয়ে বিরোধ—এগুলো অনলাইনে নিষ্পত্তির সুযোগ তৈরি করছি,” বলেন আসিফ নজরুল।
তিনি আরও বলেন, “নিম্ন আদালতের সংস্কার যতই করা হোক, যদি উচ্চ আদালতে সংস্কার না আসে, তাহলে প্রকৃত পরিবর্তন আসবে না। নিম্ন আদালতে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হলেও, উচ্চ আদালতে তা বছরের পর বছর ঝুলে থাকে।”
আরও পড়ুন : বিচারকদের বদলি-পদায়ন কমিটিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে রাখায় উদ্বেগ
আসিফ নজরুল উচ্চ আদালতের বিচারকদের ইন্সপেকশন পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “অনেক সময় ইন্সপেকশন এক ধরনের আনন্দ ভ্রমণে পরিণত হয়। কোথাও কোথাও দুই লাখ টাকার বেশি খাবারের বিল হয়েছে, যা নিম্ন আদালতের বিচারকরাই বহন করেছেন—এটা খুবই দুঃখজনক।”
তিনি বলেন, “আমরা নিম্ন আদালত সংস্কার করছি, কিন্তু উচ্চ আদালত আগের মতো থাকলে বিচারপ্রত্যাশীরা লাভবান হবেন না। যতদিন দায়িত্বে আছি, সংস্কারের কাজ চালিয়ে যাব। বিচার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে সবার সহযোগিতা দরকার।”
এর আগে, দেশে প্রথমবারের মতো নারায়ণগঞ্জে পরীক্ষামূলকভাবে ই-বেইলবন্ড প্রবর্তন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন আইন উপদেষ্টা।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিচারপ্রার্থী মানুষের ভোগান্তি কমাতে এখন ই-বেইলবন্ডের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে দেশের বিচারব্যবস্থায় দ্রুত সময়ে সুফল আসবে। বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি হ্রাস করার পাশাপাশি খরচের সাশ্রয় হবে। এই পদ্ধতি চালু করায় দেশে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি হবে।’
ধীরে ধীরে সারা দেশে এই উদ্যোগ সম্প্রসারণের কথা উল্লেখ করেন উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জ জেলা দায়রা জজ আবু শামীম আজাদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার প্রধান, এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানসহ আইনজীবী ও বিচারকরা উপস্থিত ছিলেন।