সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ অ্যাডভোকেট প্রয়াত আবদুল বাসেত মজমুদার
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ অ্যাডভোকেট প্রয়াত আবদুল বাসেত মজমুদার

‘গরিবের আইনজীবী’ খ্যাত আবদুল বাসেত মজুমদার: ওকালতি থেকে কল্যাণে উৎসর্গিত এক জীবন

‘ওকালতি করে টাকা আয় করি, আবার সে টাকা আইনজীবীদের কল্যাণেই খরচ করি। দিস ইজ মাই লাইফ।’ জীবদ্দশায় গণমাধ্যমে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছিলেন দেশের প্রখ্যাত আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার

আইন অঙ্গনে তিনি পরিচিত ছিলেন “গরিবের আইনজীবী” হিসেবে। দেশের ৫৮টি আইনজীবী সমিতিতে দুই লাখ টাকা করে অনুদান দিয়ে আইনজীবীদের কল্যাণে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তিনি। এছাড়া আইনজীবীদের কল্যাণে সারাদেশের আইনজীবী সমিতিতে আবদুল বাসেত মজুমদার আইনজীবী কল্যাণ ট্রাস্ট কাজ করে যাচ্ছে।

আবদুল বাসেত মজুমদার জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৮ সালের ১ জানুয়ারি, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার শানিচৌ গ্রামে। তিনি হরিচর হাইস্কুল থেকে মেট্রিক, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

ষাটের দশকের শুরুতে তিনি ঢাকায় আসেন আইন পড়ার উদ্দেশ্যে। এক বন্ধুর পরামর্শে চাকরির আবেদন করলেও পিতার উৎসাহে ওকালতির পথে পা বাড়ান। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,

“আব্বা বললেন, পড়ালেখা বাদ দিয়ে কিসের চাকরি? ঢাকায় থাকতে হলে ওকালতি পড়ো, উকিল হও। সেই কথাই আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা সম্পন্ন করে ১৯৬৬ সালে তিনি হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। পরে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, সহ সম্পাদক, সম্পাদক এবং সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বার কাউন্সিলেও তিনি একাধিকবার নির্বাচিত হন।

আরও পড়ুন : ন্যায় ব্যর্থ হলে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে: প্রধান বিচারপতি

১৯৬৫ সালে আবদুল বাসেত মজুমদার বিয়ে করেন রওশন জাহান মেহেরুন্নেসাকে। তাদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে গোলাম মহিউদ্দিন আবদুল কাদের ব্যবসায়ী, ছোট ছেলে সাঈদ আহমদ রাজা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, যিনি বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্যও ছিলেন। মেয়ে ফাতেমা আক্তার লুনা রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী এবং খাদিজা আক্তার ঝুমা উত্তরা মেডিকেল কলেজের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর।

তিনি কেবল আইন পেশায় নয়, সামাজিক সেবাতেও ছিলেন অনন্য। তার উদ্যোগে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার আন্দারিপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘আবদুল বাসেত মজুমদার মাদরাসা ও এতিমখানা’, আর নিজ গ্রামের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন একটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র

২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এই বিশিষ্ট আইনজীবী। আজ তার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী

তার জীবন ও কর্ম এখনো আইনজীবী সমাজে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। আইন পেশায় মানবিকতা, সততা ও সহানুভূতির যে দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছেন, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।