মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির দুই সদস্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলের নাম ব্যবহার করে টাকা আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। মৌলভীবাজারের আইনজীবী সহকারী রনজিৎ কান্তি নাগ অ্যাটর্নি জেনারেলের নাম ভাঙিয়ে ৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে মৌলভীবাজার জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (জিপি) অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ ও অ্যাডভোকেট মুকুল আহমেদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে প্রেরিত দরখাস্তে রনজিৎ কান্তি নাগ অভিযোগ করেন, তিনি মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির অধীন “আইনজীবী সহকারী সমিতি”-র সদস্য হিসেবে ২০০২ সাল থেকে দীর্ঘ ২২ বছর সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কিন্তু গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষিতে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়নুল হকের স্বাক্ষরে তার সদস্যপদ ও আইনজীবী সহকারী কার্ড (নং-৮৫) বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে তিনি ঐ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে রিট (নং ১৪৮১২/২০২৪) দায়ের করেন।
রনজিৎ কান্তি নাগের অভিযোগ অনুযায়ী, এ ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে জি.আর. মামলা নং ২৫৬/২০২৪ (সদর) ও দ্রুত বিচার মামলা নং ০৬/২০২৪ দায়ের হয়। মামলাগুলিতে তিনি দীর্ঘ ৪ মাস ১৯ দিন মৌলভীবাজার কারাগারে আটক থাকার পর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।
তিনি আরও জানান, কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী তার মুক্তির জন্য নানা আইনজীবীর সহায়তা প্রার্থনা করেন। তখন মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মুকুল আহমদ তার স্ত্রীকে জানান, সরকারি নিযুক্ত জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার) অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদের মাধ্যমে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব, এবং টাকা দিলে মামলার নিষ্পত্তি ও জামিনের ব্যবস্থা করা যাবে।
আরও পড়ুন : সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার, জাতীয় ঈদগাহে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ
দরখাস্তে উল্লেখ করা হয়, অ্যাডভোকেট মুকুল আহমদের পরামর্শে রনজিৎ কান্তি নাগের স্ত্রী ২০২৫ সালের ১২ মার্চ বিকাল ৪টার দিকে মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির ১ নম্বর বার ভবনের সামনে সিএনজিতে বসা অবস্থায় মুকুল আহমদকে ৩ লাখ টাকা প্রদান করেন। পরদিন, ১৩ মার্চ, বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদের নির্দেশে যমুনা ব্যাংক কোর্ট উপশাখার ম্যানেজার শরীফুল ইসলামের নিকট আরও ৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়, যা ব্যাংকের সিসি ক্যামেরায় সংরক্ষিত রয়েছে বলে অভিযোগে দাবি করা হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, দুই আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে “বিশেষ সম্পর্ক” থাকার কথা বলে প্রতিশ্রুতি দেন যে, এই টাকা তাঁকে প্রদানের মাধ্যমে মামলাগুলোর নিষ্পত্তি, জামিন এবং আইনজীবী সহকারী কার্ড পুনরায় ইস্যুর ব্যবস্থা করা হবে। এই বিশ্বাসে রনজিৎ কান্তি নাগ তার দায়েরকৃত রিট মামলাও হাইকোর্ট থেকে প্রত্যাহার করেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, বরং দুই আইনজীবীই পরবর্তীতে সমস্ত কিছু অস্বীকার করেন এবং অপমানজনক আচরণ করেন বলে দরখাস্তে উল্লেখ করা হয়েছে।
রনজিৎ কান্তি নাগ অভিযোগ করেন, “এডভোকেট মামুনুর রশিদ (জিপি) ও এডভোকেট মুকুল আহমদ আমার কাছ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলের নামে মোট ৮ লাখ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু টাকা নেওয়ার পর তারা প্রতিশ্রুত কোনো কাজ করেননি। উল্টো আমার রিট মামলা তুলে নিতে বাধ্য করেছেন এবং এখন টাকা ফেরত দিতেও অস্বীকার করছেন।”
আরও পড়ুন : বরগুনায় মিথ্যা চাঁদাবাজীর মামলা করায় বাদীকে কারাদণ্ড
তিনি আরও জানান, আইনজীবী সহকারী কার্ড বাতিল হওয়ার কারণে তিনি এখন আর আদালতে কাজ করতে পারছেন না, ফলে তার স্ত্রী, তিন সন্তান ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে চরম অর্থকষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
দরখাস্তের মাধ্যমে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে আবেদন করেছেন, উল্লিখিত দুই আইনজীবী কর্তৃক আত্মসাতকৃত ৮ লাখ টাকা তার নিকট ফেরত দেওয়া এবং তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হোক।
অভিযোগের বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (জিপি) অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব কিছু অস্বীকার করেন। তিনি মুঠোফোনে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে জানান, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এখানে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। আমার কাছে তথ্য-প্রমাণ আছে। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা।
অভিযোগকারী রনজিৎ কান্তি নাগ এক সময় তাঁর মোহরার ছিলেন জানিয়ে সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ আরও বলেন, সে (রনজিৎ কান্তি নাগ) বহিষ্কৃত, বারের সাথে তাঁর গণ্ডগোল চলছে। তাঁর নামে দায়েরকৃত মামলায় আমি রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের কঠোর বিরোধিতা করেছি বলে সে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। অভিযোগের বিষয়ে আমাকে ডাকা হলে এখানে যে আমি জড়িত নই, সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে প্রস্তুত আছি।
এছাড়া অপর অভিযুক্ত অ্যাডভোকেট মুকুল আহমেদের কন্টাক্ট নাম্বার না থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম।

