দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) - এর প্রধান কার্যালয়

ছোট চাকুরেদের বড় দুর্নীতি: গাড়িচালক, সার্ভেয়ার স্টোরকিপাররা কোটিপতি

চট্টগ্রাম ওয়াসার গাড়িচালক মো. তাজুল ইসলাম আহামরি বেতন পান না। তবে তিনি এখন কোটিপতি। থাকেন চট্টগ্রাম নগরীর পশ্চিম শহীদনগরের ৬৪৭/আই/১২১৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের চারতলা নিজস্ব এয়ারকন্ডিশন বাড়িতে। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রাথমিক তদন্তে তাজুল ও তার স্ত্রীর নামে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে এক কোটি ৭২ হাজার ৮১৯ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে। এর মধ্যে ৭৫ লাখ ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকার সম্পদ অর্জনের কোনো বৈধ উৎস পায়নি দুদক। দুদকের মামলায় এখন কারাগারে রয়েছেন তাজুল।

গত বছরের ২৫ অক্টোবর দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জাফর আহমেদ বাদী হয়ে তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা করেন।

তাজুল একা নয়, চট্টগ্রামে পিডিবির স্টোরকিপার মো. নুরুল্লাহ কবিরও কোটিপতি। তিনি তার সংস্থার আরবান প্রকল্পের অর্ধকোটি টাকার নতুন ও পুরনো মালপত্র বিক্রি করে পুরোটাই আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রমাণ পায় দুদক। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর নগরীর ডবলমুরিং থানায় তাকে আসামি করে করা হয় দুর্নীতি মামলা। কুমিল্লার হোমনা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আবদুল বাতেনের ছেলে নুরুল্লাহ মামলার পর থেকেই পলাতক।

ছোট পদের কোটিপতি কর্মী আরও আছেন। দুর্নীতি মামলায় কারাগারে গেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সাবেক সার্ভেয়ার এসএম নাদিম। দুদকের মামলার আসামি হয়ে পলাতক আছেন- জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার সাবেক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, আবদুল কুদ্দুছ, মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম মুরাদ। পৃথক আরেকটি দুর্নীতি মামলার আসামি হয়ে পলাতক চট্টগ্রাম গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা এম সাদেক হোসেন। দুদকের তদন্তে দেখা গেছে, প্রায় কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক পিডিবি চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (হিসাব) ফজলে এলাহী ও তার স্ত্রী। তাদের বিরুদ্ধে দুটি দুর্নীতি মামলা করেছে দুদক।

দুদক চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক লুৎফর কবির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে দুর্নীতিবাজদের তথ্য সংগ্রহ করে তদন্তে যাদের প্রচুর অবৈধ অর্থ সম্পদ থাকার প্রমাণ মিলছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। তদন্তে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করা গাড়ি চালক, স্টোরকিপার, সার্ভেয়ার, ভাণ্ডাররক্ষক, হিসাবরক্ষকদের গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারেও পাঠাচ্ছে দুদক। মামলার পর অনেকে পলাতক রয়েছেন।দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে দুদকের।’

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা এম সাদেক হোসেন, হালিশহর এলাকার মোহাম্মদ আজম খান ও উত্তর হালিশহর নতুনপাড়া এলাকার মোহাম্মদ জানে আলমের বিরুদ্ধে নগরীর খুলশী থানায় দুর্নীতি মামলা করেছে দুদক। তাদের মধ্যে আসামি জানে আলমকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠান আদালত। বাকি দুই আসামি সাদেক ও আজম পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (হিসাব) ফজলে এলাহী ও তার স্ত্রী ফেরদৌসী বেগমের বিরুদ্ধে নগরীর ডবলমুরিং থানায় পৃথক দুটি মামলা করে দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ আহমেদ। দুটি মামলায় তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় বৈধ আর কোনো আয়ের উৎস না থাকলেও বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

এ ছাড়া ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে পিডিবির কোটিপতি ভাণ্ডাররক্ষক এএসএম হোসাইনুর জামান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন দুদক। পিডিবির ইলেকট্রিশিয়ান সহযোগী হিসেবে ১৯৮৭ সালে চতুর্থ শ্রেণির পদ দিয়ে চাকরি শুরু করলেও চাকরিজীবনের ১৯ বছরেই কোটিপতি বনে গেছেন তিনি। চট্টগ্রাম শহরের হালিশহরে তার একটি সাততলা দৃষ্টিনন্দন বাড়ি, কুমিল্লার গ্রামের বাড়িতে দুই ইউনিটের একটি দ্বিতল ভবনসহ প্রচুর অবৈধ সম্পদ রয়েছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। সূত্র : সমকাল

সম্পাদনা- ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম