শিশু গৃহকর্মী নির্যাতন

শিশু গৃহকর্মী নির্যাতন বন্ধে বাধা আইনি দুর্বলতা

দেশে গত কয়েক বছর ধরে বেড়েছে গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা ও হত্যার ঘটনা। বেশিরভাগ সময়ই গৃহকর্মীদের সুরক্ষা বাড়াতে নীতিমালার আইনি কাঠামো না থাকায় এসব মামলা পরিচালিত হয় ফৌজদারি আইনে অথবা নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে। উপরন্তু, কোন নির্দিষ্ট কর্মঘন্টা না থাকা, স্বল্প বেতন আর শিশু অধিকার বঞ্চিত থাকা ও আইনি সুরক্ষা বঞ্চিত থাকায় আড়ালেই থেকে যায় ‘গৃহকর্মী নির্যাতনের’ ভয়াবহতা। তাই ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকায় গৃহকর্মী অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান মানবাধিকার কর্মীদের।

ডিমের কুসুম ভেঙ্গে যাওয়ায় গৃহকর্মী সাবিনাকে নির্যাতন, আছে বনশ্রীতে গৃহকর্মীকে হত্যার ঘটনা। শুধু রাজধানীতে নয়, ছোটখাটো যে কোন ভুল হলেই শিশু গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতন নিত্য ঘটনা সারা দেশে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে, ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত আড়াই বছরে কমপক্ষে ১৪৯ জন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে নির্যাতনের পর হত্যা বা আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ৮৬টি। কিন্তু সংস্থাটির তথ্য বলছে, ১৪৯ জন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হলেও থানায় মামলা হয় ৬২টির।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫০ জন গৃহকর্মী, ধর্ষণ করা হয়েছে ১২ জনকে, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ২ জনকে, নির্যাতনে পর আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন এবং শারীরিক নির্যাতনের ফলে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের।

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে গৃহকর্মী হিসেবে শিশুদের নিয়োগ, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এই কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার দাবি জানান মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রকল্প পরিচালক (শিশু নিরাপত্তা) রাফিজা শাহীন বলেন, ‘গৃহকর্মী শিশুকে কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয় নাই। গবেষণা নয়, আমরা সাদা চোখেই দেখতে পারি যে ওই কাজটি অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক শিশু জীবনও হারাচ্ছে। কোন গৃহকর্মী যদি নির্যাতিত হয় তাহলে সে যে কোথাও রিপোর্ট করবে তেমন কোন সিস্টেম কিন্তু বাংলাদেশে নাই।’

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অপরাধের বিচার বা শাস্তির উদাহরণের সংখ্যা খুবই নগণ্য। এছাড়া ফৌজদারি আইনে অথবা নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের আইনে মামলাগুলো হওয়ায় শাস্তি ও আইনি প্রক্রিয়াও দীর্ঘ হয়।

হাইকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম বলেন, ‘শিশু গৃহকর্মীদের রক্ষায় সরকার কিন্তু কোন আইন করতে পারেনি। আর যদি মেরে ফেলা হয় বা আঘাত করা হয় সেক্ষেত্রে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অথবা দণ্ডবিধি আইনে মামলা হয়ে যাচ্ছে। মামলা হওয়ার পর সেটির তদন্তে বছরের পর বছর সময় লেগে যাচ্ছে।’

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রকল্প পরিচালক (শিশু নিরাপত্তা) রাফিজা শাহীন বলেন, ‘যদি নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তাহলে গৃহকর্মীর বয়স কত হবে সেটি সরকারকে আইন করে নির্ধারণ করে দিতে হবে। এছাড়া একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর একটা জায়গায় রিপোর্ট করতে পারবে যে সে ভালো আছে।’

এছাড়া শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ বন্ধে বিভিন্ন ঘটনায় আদালতের দেয়া অবজারভেশনগুলো আমলে নিয়ে আইন পরিবর্তনেও আহ্বান জানান তারা। সময়টিভি


[youtube https://www.youtube.com/watch?v=5wAS6FzYrb8?rel=0&controls=0&showinfo=0]