অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন

আইনজীবীদের আসন সংকট নিরসনে বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিব: অ্যাড. আমিন

এ এম আমিন উদ্দিন। সুপ্রিম কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও  সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক হিসাবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং আসন্ন নির্বাচনে (সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের ২০১৯-২০ বর্ষের) সভাপতি পদপ্রার্থী। নির্বাচিত হলে আইনজীবী ও সমিতির কল্যাণে নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের বিশেষ প্রতিনিধি প্রিন্স মাহামুদ আজিমের নেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে।

ল’ইয়ার্স ক্লাব : অভিযোগ আছে আইনজীবীদের প্রশিক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেই, এই ক্ষেত্রে সমিতি কি উদ্যোগ নিতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

অ্যাড. এ এম আমিন : আদালতে জুনিয়র আইনজীবীরা অনেক বেশী সংখ্যায় তালিকাভুক্ত হচ্ছে কিন্তু সে অনুযায়ী সিনিয়রদের সংখ্যা বাড়ছে না। তাই জুনিয়ররা যেন সিনিয়রদের সাথে প্র্যাকটিসের সুযোগ না পেলেও তারা সঠিকভাবে আদালতের কার্যক্রম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারেন, তারা যেন শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে না পড়েন, সেজন্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে প্রথিতযশা সিনিয়র আইনজীবীদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। উক্ত প্রশিক্ষণে তরুণ আইনজীবী ও সিনিয়র আইনজীবীদের আলোচনার মাধ্যমে প্রশ্ন উত্তর উঠে আসবে। তাতে করে তরুণ আইনজীবীরা তাদের পেশার ক্ষেত্রে আরও বেশী পরিপক্ক হবে এবং সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আইনাঙ্গনে নিজেদের মেলে ধরতে পারবেন।

ল’ইয়ার্স ক্লাব : সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবীদের কিউবিকেল সমস্যা একটি অন্যতম সমস্যা। এই সমস্যা নিরসনে আপনি নির্বাচিত হলে কি ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন?

অ্যাড. এ এম আমিন : ২০০১ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ভবনটি নির্মাণ করা হয়। তখন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের সংখ্যা ছিল মাত্র তিন হাজার কিন্তু বর্তমানে সেটা আট হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সুতরাং কিউবিকেল (আইনজীবীদের বসার জায়গা)  স্বল্পতা থাকাটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু এখন যেহেতু আইনজীবীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে তাই এই সমস্যা নিরসন একান্ত আবশ্যক বলে আমি মনে করি। এই জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অনেক খালি জায়গা রয়েছে, সেখানে একটা বহুতল ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন। আমি যদি আসন্ন আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হলে আমার প্রধান কাজ হবে কিউবিকেল সমস্যা নিরসনে সরকারের সাথে যোগাযোগ করে একটা বহুতল ভবন নির্মাণ করা। এই ক্ষেত্রে কিউবিকেল সমস্যা অনেকাংশে লাঘব হবে।

ল’ইয়ার্স ক্লাব : কিউবিকেল বরাদ্দে যে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, এই ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?

অ্যাড. এ এম আমিন :  ২০০৬-০৭ সালে আমি যখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ছিলাম ঐ সময়ে আমরা আইনজীবীদের পেশা ও দক্ষতার ভিত্তিতে কিউবিকেল বরাদ্দ দিয়েছি। সুতরাং এইবারেও আমি নির্বাচিত হলে সুষ্ঠুভাবে কিউবিকেল বরাদ্দের ব্যাপারটা অব্যাহত রাখবো।

ল’ইয়ার্স ক্লাব : নির্বাচিত হলে আদালত অঙ্গনে দুর্নীতি নিরসনে আপনার ভূমিকা কি হতে পারে?

অ্যাড এ এম আমিন :  দুর্নীতি একটা সমাজিক ব্যাধি। আর এই দুর্নীতি যদি আদালত প্রাঙ্গণে প্রতিলক্ষিত হয় এটা আমাদের জন্য অসম্ভব রকম দুর্ভাগ্যের বিষয়। এই দুর্নীতি থেকে সরে আসতে হলে সকলে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। আদালতে শুধু আইনজীবীরা নয় তার বাহিরেও অনেকে থাকেন। যাদের মাধ্যমে আদালত অঙ্গনে দুর্নীতি প্রবেশ করতে পারে। আমি নির্বাচিত হলে আইনজীবীদের বাহিরে অন্যান্যদের নিভৃত করতে সম্মিলিতভাবে সকল আইনজীবীদের সাথে আলোচনা করবো। আদালত অঙ্গনে দুর্নীতি প্রতিরোধে কঠোর থেকে কঠোরতর পদক্ষেপ নিবো। দুর্নীতি প্রতিরোধে আমাদের মাননীয় প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এবং আইনজীবী সমিতির সবাই যদি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারি তাহলে আদালত অঙ্গনের দুর্নীতি বিলুপ্ত হবে।

ল’ইয়ার্স ক্লাব : আপনি তো সমিতির সাবেক সম্পাদক ছিলেন সে সময়ে আইনজীবীদের কল্যাণে কি কি ভূমিকা রেখেছেন?

অ্যাড এ এম আমিন :  ২০০৬-০৭ সালে আমি যখন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ছিলাম, সে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এক এগারোর সময় আইনজীবীদের উপর যে সকল সমস্যা ছিল সেটা আমরা সমাধানের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। তৎকালীন সময়ে হঠাৎ আইনজীবীদের উপরে ভ্যাট চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিলো আমরা সেটা রুখে দিয়েছি। নারী আইনজীবীদের বসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। আমরা সেটার ব্যবস্থা করেছি। তখন সুপ্রিম কোর্টে বিদ্যুতের প্রচণ্ড সমস্যা ছিল। সেটা নিরসনে আমরা সুপ্রিম কোর্টে একটা সাব-স্টেশন বসিয়েছিলাম। বারের সম্পৃক্ততা ও আইনজীবীদের সোহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সবাইকে নিয়ে মঞ্চে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছি।

ল’ইয়ার্স ক্লাব : নির্বাচিত হলে আইনজীবী ও সমিতির কল্যাণে আপনার পরিকল্পনা কি?

অ্যাড এ এম আমিন :  আইনজীবী সমিতি আইনজীবীদের কল্যাণেই প্রতিষ্ঠিত। সভাপতি হিসাবে সমিতিতে নির্বাচিত হলে আমি একক সিদ্ধান্তে কিছুই করতে পারবো না। সমিতির সংখ্যাগরিষ্ঠ যে সিদ্ধান্ত নিবে সেই মোতাবেক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। আইনজীবী ও সমিতির কল্যাণে আশা করি সমিতির সবাই ঐক্যমতে উপনীত হবে। আগেই বলেছি,  নির্বাচিত হলে প্রথমত, আমি কিউবিকেল সমস্যা সমাধানে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য কাজ করবো। দ্বিতীয়ত, বেনেভলেন্ট ফান্ড ও কন্টিবিউটরি ফান্ড এই দুইটার সমন্বয় করার চেষ্টা করবো। কারণ একটা সমিতিতে দুই ধরণের নিয়ম চালু রাখা খুব একটা শুভকর নয়। তাই এই জায়গা থেকে সরে এসে সবাইকে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু একটা করে দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। তৃতীয়ত, তরুণ আইনজীবীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। এছাড়াও দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে  আইনজীবীদের বাথরুম গুলোকে সংস্কার করা সহ সুপ্রিমকোর্ট অঙ্গনকে পরিষ্কার রাখা। আমি নির্বাচিত হলে উপরে উল্লেখিত বিষয় সমূহে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবো সবার সম্মিলিত সহযোগিতায়।

ল’ইয়ার্স ক্লাব : সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে আইনজীবীদের ভূমিকা কি হতে পারে?

অ্যাড এ এম আমিন : সমাজে ভালো মানুষরা যেন কোনভাবে ক্ষতিগস্ত না হয় সেইদিকে আমরা সকলে যদি লক্ষ্য রাখি এবং ভালো মানুষদের সহযোগিতা করি তাহলে সমাজের উন্নতি সাধিত হবে।

ল’ইয়ার্স ক্লাব : ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময় থেকে ল’ইয়ার্স ক্লাব ডটকমকে সময় দেওয়ার জন্য

অ্যাড এ এম আমিন :  ল’ইয়ার্স ক্লাব ও এর অগনিত সম্মানিত পাঠকদেরও ধন্যবাদ।