বাংলাদেশের শহরগুলোর ৫৪ শতাংশ নারী সহিংসতার শিকার হন। আইন বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছ থেকে তারা খুব বেশি সহযোগিতা পান না। গণপরিবহন ও নগর কাঠামোও নারীবান্ধব নয়। বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইডের এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সংস্থাটি ‘কার শহর?’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। একই দিনে বাংলাদেশসহ ৪৫টি দেশে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এটি উপস্থাপন করেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ম্যানেজার কাশফিয়া ফিরোজ।
যুক্তরাষ্ট্র, আফ্রিকা ও এশিয়ার ১০টি দেশের ওপর এই গবেষণা করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, নারীর নিরাপত্তা বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থা ভালো নয়। দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রাপ্ত নম্বর ১০০-এর মধ্যে ৩৯ দশমিক ৩২, অবস্থান ষষ্ঠ এবং প্রাপ্ত গ্রেড ‘ডি’।
বাংলাদেশ, ব্রাজিল, কঙ্গো, জর্ডান, লাইবেরিয়া, নেপাল, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়েতে নগরে নারীর নিরাপত্তার বিভিন্ন সূচকের তথ্য নিয়ে এ গবেষণা করা হয়েছে। এতে নারীর প্রতি সহিংসতার সামগ্রিক পরিস্থিতি, সহিংসতা প্রতিরোধে আইন কাঠামোর উপস্থিতি, সহিংসতা নিরসনে বাজেট বরাদ্দের পরিকল্পনা, জেন্ডার সংবেদনশীল নগর-পরিকল্পনা এবং জেন্ডারবান্ধব গণপরিবহন পরিকল্পনা এবং নকশা- এই পাঁচটি বিষয়ে কোন দেশ কেমন করছে, সে তথ্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। গবেষণায় নেপালের অবস্থান সবচেয়ে ভালো। দেশটি ‘বি’ গ্রেডে আছে। তাদের স্কোর ৭২ দশমিক ৬৫। ৮১ থেকে ১০০ নম্বরের মধ্যে কোনো দেশ নেই, অর্থাৎ ‘এ’ গ্রেডে কেউ নেই।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, নারীরা নগরে তাদের প্রতিদিনের কাজ করতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। সহিংসতার শিকার হন ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ নারী। সহিংসতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেও তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এ ছাড়া সহিংসতার শিকার নারীদের ৬৫ ভাগ সমাধান খুঁজতে গিয়ে পুলিশের কাছে দ্বিতীয়বার হয়রানির শিকার হন। ৫৭ শতাংশ নারী মনে করেন, তাদের অভিযোগ গুরুত্বসহকারে নেওয়া হবে না।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আক্তার মাহমুদ, র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ মুফতি মাহমুদ খান, বিআরটিএর সচিব শওকত আলী, ঢাকা মেট্রোপলিটন আনসারের পরিচালক হিরা মিয়া, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. মালেকা বেগম, ইউএন উইমেনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ শওকো ইসহিকাওয়া।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, এ শহর পুরুষের। সকালে নারীদের অফিসে যেতে হলে পুরুষচালিত রিকশা ও পরিবহনে যেতে হয়। এমনকি অফিসের দারোয়ানও পুরুষ। তিনি আরও বলেন, অ্যাপস ও জাতীয় হেল্পলাইন সেন্টার ১০৯ চালু হওয়ায় সহিংসতার হার কিছুটা কমেছে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমকেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা বলেন, দুঃখের বিষয়, যৌন হয়রানি বন্ধে এখনও বাংলাদেশে সুনির্দিষ্ট আইন নেই। তাই সহায়তা চাইতে গেলে পুলিশের কাছে কম সহযোগিতা পান নারীরা। রাস্তাঘাটে যে হয়রানি করা হয়, তা থামানোর জন্য আইন করতে হবে।
অধ্যাপক ড. আক্তার মাহমুদ বলেন, শহরের অবকাঠামো নারীবান্ধব নয়। রাস্তা, ফুটপাত, ভবন, যানবাহন, পার্ক, উন্মুক্ত স্থানে নারীরা স্বাভাবিক ও নিরাপদভাবে চলতে পারেন না।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, সহিংসতার ঘটনা ঘটার পর প্রমাণসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে আসতে হবে। শওকত আলী বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় গণপরিবহনের সংখ্যা কম। এর মধ্যে বিশৃঙ্খলা রয়েছে।