প্রতীকী ছবি

যেসব অভিযোগে বিচারকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও মামলা করা যাবে

অসদাচরণ, দুর্নীতি, রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর কাজসহ কয়েকটি কারণে নিম্ন আদালতের বিচারক, তথা জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও বিভাগীয় মামলা করা যাবে।

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা ২০১৭ এর গেজেটে এমন বিধির কথা বলা হয়েছে।

দীর্ঘ টানাপড়েনের পর সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও আইন মন্ত্রণালয় ঐক্যমত্যে আসার পর এ গেজেট প্রকাশিত হয়।

বিধিমালায় মোট ৭টি অধ্যায়ের ৩৫টি বিধি রয়েছে। সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি বিধিমালা প্রণয়ন করেন। বিধিমালার প্রথম দিকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের অদক্ষতা ও তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান তদন্ত, ব্যবস্থাগ্রহণকারী তথা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের বিষয় এবং সংজ্ঞার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

পরে অভিযোগ অনুসন্ধান ও বিভাগীয় মামলার রুজু, সাময়িক বরখাস্ত ও অবসান, দণ্ড, তদন্ত, দণ্ড আরোপ পদ্ধতি, আপিল ও রিভিউ এবং সব শেষে বিবিধ বিষয় তুলে ধরা হয়।

অনুসন্ধান ও বিভাগীয় মামলার কারণগুলোতে বলা হয়েছে, সার্ভিসের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে এক বা একাধিক কারণে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে এই বিধিমালার অন্যান্য বিধান অনুসারে অনুসন্ধান এবং বিভাগীয় মামলা রুজুসহ আনুষঙ্গিক সব পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।

‘শারীরিক বা মানসিক অদক্ষতা ব্যতীত অদক্ষতার সংজ্ঞাভুক্ত অন্য কোনো পরিস্থিতি; অসদাচরণের সংজ্ঞাভুক্ত কোনো কাজ, দুর্নীতিমূলক কার্য বা দুর্নীতিতে জড়িত থাকার সংজ্ঞাভুক্ত কোনো কাজ বা পরিস্থিতি, রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর কার্যের সংজ্ঞাভুক্ত কোনো কাজ বা পরিস্থিতি, সার্ভিস ত্যাগের সংজ্ঞাভুক্ত কোনো কাজ; ফৌজদারি অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ।’

এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, বেনামী পত্রকে অগ্রাহ্য করা হবে। তবে তাতে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে এবং অভিযোগের সমর্থনে কাগজপত্র সংযুক্ত থাকলে বেনামী পত্রকেও অভিযোগের কারণ হিসেবে গণ্য করা যাবে।

এছাড়াও শারীরিক বা মানসিক অদক্ষতার বিষয়ে বিধির ২৩ ও সার্ভিস ত্যাগের ক্ষেত্রে বিধির ২৪ অনুসারে কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে বলেও বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়।

সাময়িক বরখাস্তকরণ ও তার মেয়াদের বিষয়ে বলা হয়, সার্ভিসের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজুর সময় পরবর্তী যে কোনো পর্যায়ে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ অনুসারে লিখিত আদেশ দিয়ে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারবে। সাময়িক বরখাস্তের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ এক বছর। এক বছরের মধ্যে অভিযোগের তদন্ত সম্পন্ন করে বিভাগীয় মামলার রুজুর আদেশ ইস্যু করতে হবে। অন্যথায় সাময়িক বরখাস্তের আদেশ সয়ংক্রিয়ভাবে প্রত্যাহার হয়েছে বলে গণ্য হবে। তবে বিভাগীয় মামলা চালু থাকবে।

বিধিমালায় নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রপতিকে করা হয়েছে। এছাড়াও উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ অর্থ রাষ্ট্রপতি বা তৎকর্তৃক সংবিধানের ৫৫ (৬) অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রণীত রুলস অব বিজনেসের আওতায় সার্ভিস প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়।’

প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ের আলোকে বিচারিক আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। ১২ দফার মধ্যে ইতোমধ্যে কয়েক দফা বাস্তবায়ন করেছে সরকার। গত বছরের ২৮ আগস্ট এই মামলার শুনানিতে আপিল বিভাগ জানান, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিল ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ, যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী। এরপরই সুপ্রিম কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। একইসঙ্গে ওই বছরের ৬ নভেম্বরের মধ্যে তা প্রণয়ন করে প্রতিবেদন আকারে আদালতকে অবহিত করতে নির্দেশ দেয়।

প্রকাশিত গেজেটে বলা রয়েছে, যেহেতু বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের সাময়িক বরখাস্ত, বরখাস্ত ও অপসারণ এবং শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে পৃথক বিধান প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সেহেতু সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বিধিমালা প্রণয়ন করেছেন।

নিজস্ব প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম