বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত

নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে জেলা-উপজেলা কোটা বাতিল

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন সনদধারী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে উপজেলা, জেলা কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে নিবন্ধন সনদধারী শিক্ষকদের নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সনদের মেয়াদ থাকবে বলে রায় দিয়েছেন আদালত।

আদেশে আরও বলা হয়, রায় পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন সনদধারী শিক্ষকদের মেধা তালিকা এনটিআরসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

নিয়োগের উদ্দেশ্যে এনটিআরসিএ যদি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুপারিশ করে তবে কপি পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য গঠিত ব্যবস্থাপনা কমিটি বা গভর্নিং কমিটি বাতিল করবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড।

রিটকারী আইনজীবী মো. সাহাবুদ্দীন খান লার্জ আদেশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, কয়েকশ রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। এল ফলে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষকের চাকুরির দোয়ার উন্মুক্ত হলো।

আদালতে রিটের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন ব্যারিস্টার এম আমির উল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ড. শাহদীন মালিক, ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন, সাহবুদ্দীন খান লার্জ, হুমায়ুন কবীর, সিরাজুল ইসলাম খান রাজীব, মো. মহিউদ্দিন হানিফ, ইশরাত হাসান। এনটিআরসিএর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার কাজী মাইনুল হাসান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস, তাইতাস হিল্লোল রেমা।

আদালতের রায়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়ে ৯০ দিনের মধ্যে একটি জাতীয় মেধা তালিকা করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের সনদ দিতে বলা হয়েছে। সনদধারীদের নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সনদ বহাল থাকবে।

আইনজীবী মো. সাহাবুদ্দীন লার্জ বলেন, রায়ে আদালত সাত দফা নির্দেশনা দেন। নিবন্ধন সনদধারী সিরাজগঞ্জের লিখন কুমার সরকারসহ বিভিন্ন জেলার কয়েক হাজার ব্যক্তির করা কয়েকশ রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে এই রায় ঘোষণা করেছেন আদালত।

গত ২৮ মে হাইকোর্ট বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথম থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সনদধারীদের মেধাতালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে এ সময়ের মধ্যে সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের শূণ্য পদের তালিকা চাওয়া হয়। এ নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেন আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় আরো কয়েক হাজার ব্যক্তি একাধিক রিট আবেদন করেন। আদালত রুল জারি করেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ৩০ জুলাই এনটিআরসিএ আদালতে একটি প্রতিবেদন দিয়ে জানায় যে, পদ ও বিষয় ভিত্তিক ২২ হাজার ৫শ ৬৭টি পদ শূন্য রয়েছে। এ অবস্থায় রুলের ওপর শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায় দিলেন আদালত।

রায়ে দেয়া সাত দফা নির্দেশনায় বলা হয়-
(১) নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সনদ দিতে হবে। নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সনদ বহাল থাকবে।
(২) রায়ের কপি পাওয়ার পর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে উত্তীর্ণদের নিয়ে একটি জাতীয় মেধা তালিকা করতে হবে। যে তালিকা এনটিআরসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
(৩) একটি জাতীয় মেধা তালিকা করতে হবে। বিভাগ, জেলা, উপজেলা বা জাতীয় তালিকা নামে কোনো তালিকা করা যাবে না।
(৪) এনটিআরসিএ প্রতি বছর মেধা তালিকা হালনাগাদ করতে হবে।
(৫) সম্মিলিত মেধা তালিকা অনুযায়ী রিট আবেদনকারী এবং অন্যান্য আবেদনকারীদের নামে সনদ জারি করবে।
(৬) নিয়োগের উদ্দেশ্যে এনটিআরসিএ কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বরাবর যদি কোনো সুপারিশ করে তবে কপি পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য গঠিত ব্যবস্থাপনা কমিটি বা গভর্নিং কমিটি বাতিল করবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড। এবং
(৭) বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধনধারী শিক্ষকদের চাকরিতে প্রবেশের জন্য একটি সুনিদিষ্ট বয়সসীমা নির্ধারণ করতে শিগগিরই সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ পদক্ষেপ নিবে বলেও আদালতে তার পযবেক্ষনে নির্দেশনা দিয়েছেন।

এর আগে গত ৮ নভেম্বর একই বেঞ্চে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন সনদধারী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে উপজেলা, জেলা কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এছাড়া নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি সংবিধানের সঙ্গে কেন সাংঘর্ষিক হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়। ৭ দিনের মধ্যে শিক্ষা সচিব, এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আইনজীবী সাহাবুদ্দীন লার্জ বলেন, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ-প্রত্যয়ন বিধিমালার ২০০৬ এর বিধি ৯ এর উপ-বিধি ২ (গ) চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। জামালপুরের সেলিম রেজাসহ ১৭২ জন নিবন্ধন সনদধারী এ রিট দায়ের করেন। ২ এর (গ) তে বলা আছে, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের উপজেলা, জেলা এবং জাতীয়ভিত্তিক মেধাক্রম অনুসারে ফলাফলের তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশ করা হবে।

তিনি জানান, আমরা আদালতকে বলেছি কোটা পদ্ধতির কারণে মেধাবী অনেকেই চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটা সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ২৯ অনুচ্ছেদের ১ এ বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে। আদালত শুনানি শেষে এ রুল জারি করেন।

সুপ্রিমকোর্ট প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম