লেডি জাস্টিস ও বিচারপতি এস কে সিনহা

আদালত প্রাঙ্গণ – ২০১৭ : আলোচনায় লেডি জাস্টিস ও বিচারপতি এস কে সিনহা

এক বিচারপতির মৃত্যুর সংবাদ দিয়ে চলতি বছরের প্রথম দিন শুরু হয়েছিলো সুপ্রিম কোর্টের। আর বছরের সমাপ্তি ঘটেছে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দিয়ে। আলোচনায় ছিলো সুপ্রিম কোর্টের সামনে বসানো লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্যও।

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ
১১ নভেম্বর বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের ঘটনা ঘটলো। ১ আগস্ট ষোড়শ সংশোধনী অবৈধের রায় প্রকাশের পর থেকে সরকার সমর্থক আইনজীবীরা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিলেন।

২ অক্টোবর এক মাস ছুটির কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর চিঠি পাঠান বিচারপতি সিনহা। ওই ছুটির মেয়াদ ছিল ১ নভেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন বিচারপতি সিনহা।

ওই সময় তিনি ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে থাকার ইচ্ছা পোষণ করে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেন। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়া থেকে কানাডা যাওয়ার পথে ১০ নভেম্বর সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে রাষ্ট্রপতি বরাবর তার পদত্যাগপত্র জমা দেন বিচারপতি সিনহা। পরের দিন সেটি রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ে পৌঁছায়।

এদিকে ১৪ অক্টোবর দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া এক বক্তব্যে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির কাছে হস্তান্তর করেছেন। এরমধ্যে বিদেশে অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ আরো সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রয়েছে’।

সংবিধান অনুসারে ৩ অক্টোবর থেকে আপিল বিভাগের প্রবীণতম বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

ভাস্কর্যের স্থান পরিবর্তন
হেফাজতে ইসলাম এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মুখে সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য অপসারণ করে ২৫ মে দিবাগত মধ্যরাতে অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ের সামনে বসানো হয়।

২০১৬ সালের শেষ দিকে গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়। এরপর প্রায় দুই মাস এ বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কোনও মত প্রকাশ করা না হলেও ফেব্রুয়ারিতে মুখ খোলেন হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী। এক বিবৃতিতে তিনি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্যটি অপসারণের দাবি জানান।

এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের সবগুলো ধর্মভিত্তিক সংগঠন ভাস্কর্যটি সরানোর দাবিতে আন্দোলন করছিল। হেফাজতের ঘোষণা ছিল, অপসারণ করা না হলে শাপলা চত্বরে আবারও সমাবেশ করবে তারা।

এরই ধারাবাহিকতায় গত গত ১১ এপ্রিল গণভবনে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সরকারি স্বীকৃতি ঘোষণার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই প্রশ্ন তোলেন গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য নিয়ে। সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে এই গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য থাকা উচিত না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে আরও কয়েকবার প্রশ্ন তোলেন ভাস্কর্যের বাস্তবতা নিয়ে। তার প্রশ্ন, গ্রিক দেবীর গায়ে শাড়ি কেন?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণের সামনে স্থাপিত গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটা এখানে থাকা উচিত নয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের হাইকোর্টের সামনে গ্রিক থেমিসের এক মূর্তি লাগানো হয়েছে। সত্য কথা বলতে কি, আমি নিজেও এটা পছন্দ করিনি। কারণ, গ্রিক থেমিসের মূর্তি আমাদের এখানে কেন আসবে।’

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন রমজানের আগেই ভাস্কর্য সরানো আহ্বান জানায়। এর আগে ইসলামী ঐক্যজোট হরতালের ঘোষণা দেয়, রমজানের আগে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য না সরালে তারা কঠোর কর্মসূচি দেবে। অব্যাহত হুমকি আসে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক রাজনৈতিক দল, ওলামা লীগসহ সুন্নিপন্থী একাধিক সংগঠনের পক্ষ থেকে। যদিও ভাস্কর্য রক্ষার দাবিতে দেশের প্রগতিশীলদের একটি অংশ বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আসছিল।

নিজস্ব প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম