সুপ্রিম কোর্ট দিবস উপলক্ষে আলোকসজ্জা

সুপ্রিম কোর্ট দিবসের অনুষ্ঠানে যেতে না পেরে ক্ষুব্ধ সাধারণ আইনজীবীরা

সুপ্রিম কোর্ট দিবসের অনুষ্ঠানে সব আইনজীবীকে আমন্ত্রণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের সাধারণ আইনজীবীরা। এ ধরনের আচরণ আইনজীবীদের জন্য চরম অপমানের বলেও মনে করেন তারা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সর্বস্তরের আইনজীবীকে আমন্ত্রণ না করার বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরেন।

সুপ্রিম কোর্ট জাজেস স্পোর্টস কমপ্লেক্সে আয়োজিত গতকাল মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট দিবসের অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষে তিনি বলেন, ‘‘আমি এই অনুষ্ঠানে আসার সময় কয়েকজন সাধারণ আইনজীবী আমাকে ঘিরে ধরেন। তারা আমার কাছে জানতে চান, ‘কেন এই অনুষ্ঠানে সব আইনজীবীকে যেতে দেওয়া হবে না।’ তাই আমি চাই, আগামীতে যেন সব আইনজীবী এ ধরনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হয়।’’

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ব্যারিস্টার আতিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে আমরা আইনজীবীরা কাজ করছি। আমি যতদূর শুনেছি, এই অনুষ্ঠানে শুধু আপিল বিভাগের আইনজীবীদের দাওয়াত করা হয়েছে। কিন্তু আমরা যারা হাইকোর্ট বিভাগে কাজ করছি, তারাও তো বিচার বিভাগের হয়েই কাজ করছি। অথচ একটি বিশাল সংখ্যার আইনজীবীদের দাওয়াত করা হয়নি। এতে আমরা চরম অপমানিত। কেননা, হাইকোর্ট বিভাগ না থাকলে তো আপিল বিভাগ আসে না।’

তিনি বলেন, ‘সংবিধানের মূল ভিত শুরু হয় হাইকোর্ট বিভাগ থেকে। তাই হাইকোর্ট বিভাগে যারা কাজ করছেন, তারাতো এখান থেকেই পরবর্তীতে আপিল বিভাগে কাজ করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অনেক আইনজীবী এই আচরণে অপমানবোধ করেছেন। দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আচরণ হওয়া উচিৎ ছিল উচ্চ পর্যায়ের। কিন্তু তা না হওয়ায় আমরা অনেকেই হতাশায় ভুগছি। তাহলে কেন আমরা এখানে কাজ করছি?’

ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, ‘আমি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। ক্ষুব্ধ এ কারণে যে, সুপ্রিম কোর্ট দিবস উপলক্ষে অনেক বিষয় জনগণের সামনে প্রতিফলিত হবে। আমি সেখানে (অনুষ্ঠানে) থাকলে হয়তো প্রধান বিচারপতিকে (দায়িত্বরত) সুপ্রিম কোর্টের দায়-দায়িত্ব ও করণীয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারতাম। কিন্তু আমাকে পাসই দেওয়া হলো না। ঢুকতেই দেওয়া হলো না- আমার প্রশ্ন রয়ে গেছে এখানে। আশা করি, ভবিষ্যতে এই ধরনের অনুষ্ঠানে যেন আইনজীবী ও সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে উন্মুক্তভাবে এই দিবসটি পালন করা হয়।’

এদিকে সব আইনজীবীর উপস্থিতি ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালনের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যারিস্টার মো. হুমায়ুন কবির পল্লব। তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট দিবসের অনুষ্ঠানে দাওয়াত না পেয়ে আমার মতো অসংখ্য আইনজীবী বিব্রত হয়েছেন। যেহেতু এটা সুপ্রিম কোর্ট এবং প্রত্যেক আইনজীবী এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেহেতু সুপ্রিম কোর্টের ভালো-মন্দ জানা বা দেখার অধিকারতো আমাদের সবার আছেই। অথচ আমাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে অনেকের মতো আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে ক্ষুব্ধ। এতবছর পরে সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালন করা হলো, সেখানে আইনজীবীরাই থাকতে পারলেন না, তাহলে এই দিবসটি পালন হয় কী করে?’

এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা ব্যারিস্টার মো. সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মূলত জায়গার স্বল্পতার কারণে সব আইনজীবীকে আমন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। তাই আইনজীবীদের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা শুধুমাত্র ঢাকা বার ও সুপ্রিম কোর্ট বারের (আইনজীবী সমিতি) নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তবে পরবর্তীতে সবাইকে নিয়ে এই ধরনের অনুষ্ঠান করা হবে বলে আশা রাখছি।’
-বাংলা ট্রিবিউন

সম্পাদনা – ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম