রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর জাতিগত নিধনে অভিযুক্ত মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রায় ৪ লাখ মার্কিন ডলার খরচের পরিকল্পনা করেছে অস্ট্রেলিয়া। এ অর্থ বাহিনীটিকে ইংরেজি ভাষা শেখানো, বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রশিক্ষণে ব্যয় করা হবে। অস্ট্রেলিয়ার তথ্য অধিকার আইনের আওতায় প্রকাশিত এক দলিলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, প্রশিক্ষণে মিয়ানমারের বিতর্কিত সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করা হবে।
রাখাইনে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চালানো জাতিগত নিধনের জন্য সারাবিশ্বে সমালোচনা ও নিন্দার মুখে পড়েছে মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনী। গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তাবাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্ব পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ অভিযান জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ওই অভিযানের ঘটনায় খুঁজে পেয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত। জাতিসংঘ এই অভিযানকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ বলে মন্তব্য করেছে।
গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীকে ইংরেজি শেখানো ও থাইল্যান্ডে বহুজাতিক সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণের জন্য ৩ লাখ ৯৮ হাজার মার্কিন ডলার খরচ করবে প্রতিরক্ষা বিভাগ। থাইল্যান্ডে আয়োজিত ওই মহড়ায় অস্ট্রেলিয়া সহযোগী আয়োজক দেশ।
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি এ মাসে সিডনিতে অনুষ্ঠিতব্য আশিয়ান-অস্ট্রেলিয়া বিশেষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিভাগ বৃহস্পতিবার বলেছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের আচরণও এই সফরে আলোচনা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সহিংসতার অভিযোগে অস্ট্রেলিয়ার মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা মিয়ানমারের সামরিক নেতৃবৃন্দের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে। তবে সম্প্রতি মিয়ানমার রাশিয়ার কাছ থেকে যুদ্ধ বিমান ও উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ করেছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া একটি সংক্ষিপ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধের বাইরের বিষয় নিয়ে প্রতিরক্ষা বিভাগ মিয়ানমারের সঙ্গে একটি পরিমিত কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এ কর্মসূচিতে মানবিক সহায়তা ও দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা, শান্তিরক্ষা প্রশিক্ষণ ও ইংরেজি ভাষা প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে আধুনিক, পেশাদার প্রতিরক্ষা বাহিনীতে পরিণত করার লক্ষ্যে এসব করা হচ্ছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার গুরুত্ব সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সরে আসলেও তারা কেন মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে এমন প্রশ্ন এড়াতে বিবৃতিতে বলা হয়, প্রত্যেক দেশকে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।