প্রায় ২০ বছর আগে এক শিশুকে অপহরণের দায়ে কারাগারে যেতে হয় তাকে। ঘটনার প্রায় তিন বছর পর যাবজ্জীবন সাজা হয় তার। কিন্তু দরিদ্র হওয়ায় কোনো আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেননি তিনি।
দীর্ঘ দুই দশক পর এক আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে মনোয়ার বেগম নামে কক্সবাজারের সেই নারীকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন বৃহস্পতিবার (৮ মার্চ) জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
শুধু জামিনই নয়, যদি মনোয়ারা তার আত্মীয় স্বজনকে না পান, তাহলে তাকে সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের জন্য কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক এবং সমাজসেবা অফিসারকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
আদালতে আবেদনকারী আইনজীবী ছিলেন ফজলুর রহমান। আর আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. শফিউল্লাহ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের রামু উপজেলার পূর্ব ধেচুয়া এলাকার জনৈক ইসমাইলের স্ত্রী এবং কাদির হোছনের মেয়ে মনোয়ারা বেগম ওরফে মোতাহেরা বেগম ওরফে খুরশীদা বেগম ১৯৯৮ সালের ১৩ জুন কক্সবাজারের সদর উপজেলার ঝিলাংজা এলাকায় যান। সেখানে গিয়ে জনৈক মো. আবুল কালামের বাড়িতে গিয়ে মনোয়ারা বলেন, ‘আমি আত্মীয়ের বাড়ি খুঁজতে এসেছি। কিন্তু পাইনি। যদি রাত থাকতে দেন, তাহলে ভালো হয়।’ এরপর তাকে কালামের বাড়িতে থাকতে দেওয়া হয়।
পরের দিন সকালে কালামের মেয়ে কক্সবাজার প্রিপারেটরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী রাজিয়া (৮) তার বিদ্যালয়ে চলে যায়। সকালে মনোয়ারাও সেই বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে বের হন। কিন্তু দুপুরের পর রাজিয়াকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে কালাম জানতে পারেন, রাজিয়াকে পাচারের উদ্দেশ্যে মনোয়ারা অপহরণ করে নিয়ে গেছেন। তিন দিন পর ১৭ জুন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ব্রিজের গোড়ায় পুলিশের কাছে রাজিয়াসহ আটক হন মনোয়ারা।
পরে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০০১ সালের ২৭ নভেম্বর কক্সবাজারের বিচারিক আদালত ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন অধ্যাদেশের ১২ ধারায় মনোয়ারাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
আদালতে আইনজীবী শফিউল্লাহ বলেন, মনোয়ারা বেগম দরিদ্র, গরিব। তার উকিল নিয়োগের সামর্থ্য নেই।
আদালত বলেন, ‘বয়স কতো?’ জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘তখন ২৫ বছর ছিলো, এখন ৪৫ হয়েছে’। আদালত বলেন, ‘বাবা মা আত্মীয় স্বজন আছে? জামিন দিলে কই যাবে? সে কি বিবাহিত?’ আইনজীবী বলেন, ‘ঘর বাড়ি আছে। গরিব ও দরিদ্র তো। তাই হয়তো যোগাযোগ নেই।’
পরে আদালত বলেন, ‘আজ তো নারী দিবস। কিন্তু তার দীর্ঘ কারাবাস বিবেচনায় তাকে জামিন দিলাম। আর জামিনে মুক্তির পর মনোয়ারা যদি মনে করে, তার সামাজিক পুনর্বাসন দরকার, তাহলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও সমাজসেবা অফিসার তাকে পুনর্বাসন করবেন।’
আদালত আরও বলেন, এ রকম যারা দীর্ঘ কারাবাসে আছে তাদের মুক্তির পর যদি সামাজিক পুনর্বাসন দরকার হয়, তাহলে সরকার সেটা করবেন বলে পর্যবেক্ষণ দিচ্ছি। আর আদালতের এ আদেশ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, আইন সচিব ও সমাজকল্যাণ সচিব বরাবরে পাঠাতে হবে।